ভূমিকা সে-সম্ভবত ১৯৫৪ কিংবা ১৯৫৫ ; আকস্মিকভাবেই আলাপ হ'য়ে গেলো রোমাঞ্চ পত্রিকার অমিত চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই আলাপ ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছে গেলো অল্পদিনেই—এমন বন্ধুতা যে তাঁদের অনুরোধে গোড়ায় কিছু এডগার অ্যালান পো-র গল্প অনুবাদ ক'রে দিতে হ’লো—সেগুলো বেরুলো রোমাঞ্চ-তে। কিন্তু অনুবাদের বদলে তাঁদের মনে হ'লো এমন-সব গোয়েন্দা উপন্যাস চাই যার পটভূমিকা কলকাতায় যদি-বা নাও হয়, হয় যেন ভারতবর্ষ, এবং পাত্রপাত্রীরা—বাঙালি যদি নাও হয়, হয় যেন ভারতীয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এ তো সবে সূত্রপাত। তাঁরা নিজেরাই তাঁদের পছন্দসই বিলিতি গোয়েন্দা উপন্যাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বাংলা ক’রে দিতে।' এ-কথার মানে, সে-সব অনুবাদ হবে না—এই গল্পগুলোকেই ভারতীয় পটভূমিকায় ঢেলে সাজাতে হবে—প'ড়ে যেন মনে হয় এ-সব আদপেই বিলিতি গল্প নয়, দিশি ব্যাপার। সে কিন্তু সহজ ব্যাপার ছিলো না মোটেই। দেশের আবহাওয়ায় বিলিতি বায়নাক্কা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে শেষটায় এ-সব চেষ্টার ফলে যে-সব লেখা তৈরি হয়েছিলো, তা থেকে তিনটি বেছে নিয়েই এই সংকলন। অর্থাৎ অমিত চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের উৎসাহ, তাগাদা এবং পরামর্শ বিনা এ- সব রহস্যকাহিনী লেখা হ’তোই কি না সন্দেহ। এবার এই বই বেরুবার সময় তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাবার সুযোগ ঘটলো- তাঁদের ধারণা ছিলো লেখাগুলো দারুণ হয়েছে। দারুণ, না নিদারুণ—সে-বিচারের ভার অবশ্য এখন পাঠকের।
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম সিলেটে, ২৫ এপ্রিল ১৯৩৮। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্যান্ডের ভাশভি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস- নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক- তাঁর প্রথম অধ্যাপনার কাজ ছিল মায়ানমারের ইয়াঙ্গনে, তখন অবশ্য তাকে ব্রহ্মদেশ বলেই আমরা জানতাম। শিশুসাহিত্যে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতিপুরস্কার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেযেছেন, আর অনুবাদে তাঁর কৃতিত্বের জন্য ভারতীয় সাহিত্য একাদেমি তাঁকে অনুবাদ পুরস্কার-এ ভূষিত করেছিল। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার অনুবাদ সবসময়েই এই কারণে উল্লেখযোগ্য যে, তার যতোটা বিশ্বস্ত হবার চেষ্টা, ততোটাই কবিতা হবারও-যাতে কবিতা হিসেবেই তারা নিজের পায়ে বাংলা ভাষায় দাঁড়ায়। তাঁর একেবারে হালের অনুবাদ গুলোর মধ্যে মাঝ রাস্তায়: কার্লোস ড্রুমন্ড ডি অন্ডরাডির কবিতা (২০০১) ও ভিসওয়াভা শিম্বোর্সকা-র কবিতা (২০০২) সেইজন্যই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।