“সিনেমা সংক্রান্ত" বইটির প্রথমের কিছু অংশঃ সাহিত্য এবং সিনেমা সৃষ্টির জগতে পরস্পর-নির্ভরতার জটিল সম্পর্ক বহুকালের পুরনাে। কোনাে একটা বিশেষ শিল্প মাধ্যম নিজের উর্বরতার গরজে অন্য মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করছে পরােক্ষ উপকরণ অথবা প্রত্যক্ষ প্রেরণা এমন দৃষ্টান্ত সাহিত্য ও শিল্পকলার ইতিহাসে অজস্র। কীটসের যে কবিতাকে চাইনিজ স্ক্রোল পেনটিং-এর সঙ্গে তুলনা করতে পেরে তৃপ্ত হয়েছিলেন ইয়েটস, সেই ‘ওড অন এ গ্রীসিয়ান আর্ন'-এর উৎস ছিল ক্লদ লােরেনের আঁকা একটি পেনটিং। রােমান্টিক পিরিয়ডে ইতালির ভাস্কর্যের কাছে ইংরেজ কবিদের অপরিশােধনীয় কৃতজ্ঞতার কাহিনি এখন ইতিহাস। আবার এর উলটোদিকে দেখতে পাব পৃথিবীর অজস্র স্মরণীয় ছবির উদ্ভব ও বিকাশের পিছনে কবিদের বরাভয় মুদ্রা। দেলাক্রোয়ার বিশ্ববিদিত “লিবার্টি লিডিং দা পিপল’ ছবিটি যেমন আংশিক উদ্বুদ্ধ অগস্ত বারবিয়েরের কবিতায়, তেমনই আরও একাধিক ছবির জননী না হলেও ধাত্রীদেবতার ভূমিকা দান্তের ‘ডিভাইন কমেডির’ । প্রাচীন টার্নার, সুদারল্যান্ড কিংবা আধুনিক ক্লে, ক্যাণ্ডিনসকি, মিরাে-রা ছবিকে নিয়ে আসতে চেয়েছেন কবিতার কাছে, যেমন অপােলিনের কিংবা কামিংস কবিতার কাঠামােয় জুড়ে দিতে চেয়েছিলেন ছবির শরীর। | শিলার বলেছিলেন একটা পূর্ণ বিকশিত কবিতা যেমন সঙ্গীতের শক্তিময়তায়। আঁকড়ে ধরে আমাদের, তেমনই চারপাশে বিছিয়ে দেয় প্লাস্টিক আর্টের নম্র শুদ্ধতা। শিলারে উদ্বুদ্ধ নােফালিস তাই পৌছতে পারেন এই সিদ্ধান্তে : “In their essential nature, music, the visual art and poetry are one”, যাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন স্বাগনার তাঁর ‘total art form’ -এর স্বপ্নে। আমাদের আজকের আলােচনা সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যাদের অন্তরঙ্গতা সম্পর্কে পৃথিবীতে এখনও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন। পৃথিবীতে এমন চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিকের অভাব নেই, যাঁরা মনে করেন সাহিত্যের উপর পুরােপুরি নির্ভরতা থেকে সরে এসে আপন শক্তিতে চলচ্চিত্র যদি ব্যক্ত করতে না পারে নিজের ব্যক্তিত্ব, তাহলে বিশিষ্ট শিল্পমাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হবে তার সূচিপত্রঃ সাহিত্য এবং সিনেমা আক্রান্ত ও আক্রমক মৃণাল সেন-এর আমি ও চলচ্চিত্র চলচ্চিত্রে নাগরিকতার সংকট নাগরিক প্রসঙ্গে কিছু চলচ্চিত্রের লিওনার্দো দভচেঙ্কো : চলচ্চিত্রের কবি ত্রুফো : চলচ্চিত্র যাঁর আত্মা ও শরীরের রক্তমাংস ব্লাড ওয়েডিং সিনেমায় শব্দ জুরি সেজে বােম্বাইয়ে বারাে দিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এ সােশ্যালিস্ট প্রিন্স চেতন-অবচেতনের বুনুয়েল সিনেমা ২০০০ সিনেমা নিয়ে লেখা ইলমাজ গুনে সিনেমা পড়া লেখক বার্গম্যান
জন্ম ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৩১ - মার্চ ১৯, ১৯৯৭পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্রগুপ্ত) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, কলকাতা গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী। পূর্ণেন্দু পত্রীর জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার নাকোলে। পিতা পুলিনবিহারী পত্রী, মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক কলহের কারণে পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হন বাণিজ্যিক শিল্পকলা বা কমর্শিয়াল আর্টের ছাত্র হিসেবে। যদিও নানা কারণে এই পাঠক্রম শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলায় বাগনানের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা অমল গাঙ্গুলির সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট পার্টির নানান সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কলকাতায় অভিভাবক কাকা নিকুঞ্জবিহারী পত্রীর চলচ্চিত্র পত্রিকা 'চিত্রিতা' ও সাহিত্যপত্র দীপালি-তে তাঁর আঁকা ও লেখার সূচনা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়লে রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা উভয়েই একসঙ্গে চালাতে থাকেন। মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তাঁর একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৬৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি পায়। এর পর রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে স্ত্রীর পত্র ও মালঞ্চ সহ পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও নির্মাণ করেন সাতটি তথ্যচিত্র। স্ত্রীর পত্র চলচ্চিত্রটির জন্য তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত তাঁর ছেঁড়া তমসুক চলচ্চিত্রটিও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।