"তারাশঙ্করের রাধা : একটি সমীক্ষা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বাঙালি কথাকারদের মধ্যে একমাত্র তারাশঙ্করই রাঢ়বঙ্গের অধিপতি। রাঢ়ের ভূমি-জলহাওয়া-লােকজীবন সংস্কৃতির এক বিশ্বস্ত রূপকার তিনি। 'রাধা' এই সব উপাদান থেকে উৎপন্ন এক প্রামাণ্য প্রতিনিধিস্থানীয় রচনা। এ উপন্যাস আদ্যন্ত বিষয়গন্ধী। শিল্পমূল্যে বিকানাের মত চমৎকৃতি এখানে একটু কমই আছে। আখ্যানের সময়কাল সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দী। চৈতন্যপ্রয়াণের সুযােগে অনুপম বৈষ্ণব রসতত্ত্বকে সহজিয়া করে নিয়ে ছােট-বড়াে মহন্তরা আখড়াতন্ত্রের প্রতিভূ হয়ে বসেছেন। নর-নারীর যৌনজীবনাচারের এক চটকদার দার্শনিক নাম দেওয়া হয়েছে রাধাভাবিত রসলীলা। এই ভ্রষ্টাচারের এক প্রতিবাদী নায়ককে তারাশঙ্কর ঐতিহাসিক কালপটভূমে স্থাপনা করেছেন। যদিও তিনি জানেন, নানুর-কেঁদুলির মাটিতে পরকীয়াবাদের শিকড় ওপড়ানাে শক্ত কাজ। তাই তার মাধবানন্দ শেষ পর্যন্ত রাধাবাদের কাছে বিজয়পত্র লিখে দিয়েছে। এজন্য মুখর ইতিহাসের পক্ষপুটে মাধবানন্দ-মােহিনীর অনবদ্য প্রেমকাহিনীকে চড়া রঙে ধরার চেষ্টা করেন তারাশঙ্কর। ইতিহাস-আধ্যাত্মিকতার জটলা থেকে উপন্যাসের এই প্রতিবেদনকে বার করে এনে সরল ভাষ্যে প্রতিস্থাপিত করাই এই গ্রন্থরচনার মূল লক্ষ্য।