দুটি গল্প নিয়ে একটি বই বন্ধুপাখি। এ গল্পের বইটি লিখেছেন নীহার মোশারফ। পাখিবন্ধু নামটি শুনে প্রথমে একটু চমকে উঠতে হয়। কারণ মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব হয়; কিন্তু পাখিদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় নাকি! কাক এবং কাঠঠোকরা দুই বন্ধু। এ দুই বন্ধুর গল্পের নাম পাখিবন্ধু। এ গল্পের নামেই বইটির নামকরণ হয়েছে পাখিবন্ধু। কাঠঠোকরা আমরা সচরাচর দেখতে না পেলেও কাক কিন্তু সর্বত্রই দেখতে পাই। কাকের ডাক শুনে আমাদের দিনরাত্রি কাটাতে হয়। কাক শহরে যেমন দেখা যায় তেমনি গ্রামেও। যেকোনো প্রতিক‚ল পরিবেশের সাথে মোকাবিলা করে কাক টিকে থাকতে পারে। কাকের খাবার নিয়েও নেই কোনো বাদ-বিচার। বাসি, দুর্গন্ধ, পচা, মরা যেকোনো খাবার খেয়ে কাক জীবন ধারণ করতে পারে। একদিন একটা কাঠঠোকরা বেড়াতে আসে শহরে তার কুটুমের সাথে দেখা করতে। পথে কাকের সাথে দেখা হয়ে যায়। কাক বলে, ‘এসো। বসো। খাবার খেয়ে নাও। তারপর তোমাকে শহর দেখাব। জানি তুমি গাছের ভেতর লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় খেতে ভালোবাসো। শহরে গাছ কম। নেই বললেই চলে। তাই পোকামাকড়ও কম। এই মশা, মাছি, পিঁপড়ে আছে যা। তুমি যদি পিঁপড়ে না খেতে চাও তাহলে শহরের বিস্কুট, রুটি, কলা ফলের টুকরা ও ভাত খাওয়াব। তুমি একটু অপেক্ষা করো। তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।’ এরপর কাক উড়ে একটু দূরে যায়। ফ্ল্যাটবাড়ির এক কোনায় একটি ডাস্টবিন। ডাস্টবিনের আশপাশে একচিলতে রুটি, অর্ধেক আপেল ও এক টুকরা সাবান পড়ে আছে। কাক মুখে ও পায়ে করে ওসব নিয়ে আসে বন্ধুপাখি কাঠঠোকরার জন্য। কাঠঠোকরা দেখে তো অবাক। খাবার দেখে কাঠঠোকরা বলল, ‘এ তো বাসি খাবার। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। আমার বমি আসছে। আমার সেই তাজা পোকামাকড়ই ভালো। প্রকৃতির খাদ্যতালিকায় আমাদের জন্য যা লেখা আছে তাই স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর।’ এরপর দুজনের মধ্যে আরো অনেক কথা হয়। কাঠঠোকরার বিদায়বেলায় কাক বলে, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমরা কাক, চড়–ই হলেও তো শহরে আছি। সবাই গ্রামে চলে গেলে শহরের খোকাখুকুরা কী দেখবে? ওরা পাখি দেখতে পাবে না। ভুলে যাবে আমাদের নাম।’ বইটির অপর গল্পটি টুপটাপ টুপটাপ বৃষ্টি। বৃষ্টি আর পাখির গল্পে সাজানো এ বইটি সংগ্রহ করে পড়লেই গল্প পাঠের মজা পাওয়া যাবে।
ইলশে নদীর তীর ঘেঁষা একটি দ্বীপজেলা ভােলা। ভােলা জেলার বােরহানউদ্দিন উপজেলার ছােট্ট শ্যামলিমা গ্রাম চকঢােষ। সেই গ্রামের কবি নীহার মােশারফ। বাবা আবদুল জলিল মিয়া বেঁচে নেই। মা আনােয়ারা বেগম। বাবার চোখের মণি আর মায়ের স্নেহের আঁচলে বেড়ে ওঠা এই কবি ছেলেবেলা হতেই লেখে আসছেন। নব্বইয়ের শেষদিকে কবির লেখালেখিতে পদার্পণ। লেখেন- কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়াসহ অনেক বিষয় নিয়ে। লেখেন দুই বাংলায়। কলকাতার দেশ আরম্ভ, কবিসম্মেলন, টুকলু, কবিতাসীমান্ত সঞ্চিতা, ভারতবিচিত্রাসহ অসংখ্য পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে তার কবিতা।। আগামী প্রজন্মের জন্য কবির শিল্পময় সাহিত্য আশার প্রদীপ হয়ে উঠুক।। প্রকাশিত গ্রন্থ : কবিতা : জলপাই রঙে ঘেরা অর্ধদুপুর, নগ্ন শরীর লজ্জার নয় শিশু-কিশাের গল্প : যায়া ও নীলপরি ভূত-ভুতুড়ে বন্ধুপাখি ছড়া : রূপকথার রাজকন্যা