আমরা যত আধুনিক কিংবা নগরের নাগরিক হই না কেনাে- শিকড়, অস্তিত্ব ও জন্মতিথি গ্রামে। গ্রাম এখনও বাংলার প্রাণ। যদিও ঢুকে পড়েছে ডিসকালচার, মােবাইল, ইন্টারনেট। সবুজেশ্যামলে জনারণ্যে এখনও গ্রাম-আমাদের চেতনার মর্মমূলে ডাক দিয়ে যায়। আজ থেকে চুয়াল্লিশ বছর আগে, ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা দিনগুলােতে কেমন ছিল আমাদের গ্রাম, গ্রামের সবুজ ঘাস আর সহজ সরল মানুষজন? পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর আগ্রাসন, আক্রমণ, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, নিরীহ মানুষদের উপর পৈশাচিকতার ভয়ঙ্কর ঘটনাবলি আমরা প্রায় ভুলে গেছি। আমরা ভুলে গেছি পাকিস্তানিদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস ও দালালদের ভয়াবহ তাণ্ডব। স্বাধীনতা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন ও সম্ভ্রম হারানাের বেদনা এখন আমাদের তেমন আর আক্রান্ত করে না। কিন্তু একজনকে করে। তিনি মােশাররফ হােসেন ভূঞা। একাত্তরের ঘটনাবহুল গ্রামীণ আখ্যান নিয়ে চমৎকার, বর্ণাঢ্য উপন্যাস ‘অমৃতের সন্তান রচনা করেছেন তিনি। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মারফত আলীকে কিংবদন্তি বাংলার লৌকিক প্রথায় অসামান্য দক্ষতায় অঙ্কন করেছেন। তখনকার দালাল আজিজের নৃশংসতাপাঠকদের এখনও তাড়িত করে। মুক্তিযােদ্ধা ফালু’র বােন মমতার ওপর পাকিস্তান আর্মির নিপীড়ন, মমতার আত্মাহুতি- দুইলক্ষ মা বােনের জন্য দরদী প্রতীক। ‘অমৃতের সন্তান’ উপন্যাস মুক্তিযুদ্ধের মানবিক মানচিত্র। ‘অমৃতের সন্তান’ উপন্যাসিকের ‘কোনাে এক গাঁয়ের কথা’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব।