আমার আর কিছুই মনে নেই দাদুভাই! ওই বয়সে বেশি কি আর মনে থাকতে পারে বলো। আমার যা-কিছু দেখা, পাঁচজনের চোখ দিয়ে দেখেছি, তাদের কান দিয়ে শুনেছি, মন দিয়ে অনুভব করেছি। এই দেখা শোনা আর অনুভব করা আমাকে এমন করে টানে কেন সেটা অবশ্য আশ্চর্য। যাক্, এ তো অনেক শুনেছ। 'যা বলছিলাম, নিজের চোখে দেখে মনে রাখার মধ্যে ওই একখানা মুখই আমার মনে আছে। এই দেখাটুকু আমার নিজস্ব, এই মনে রাখাটুকুও। এটুকুর জন্য আর কারো চোখ কান মনের শরণ নিতে হয়নি। আমি ওই ছ'বছর বয়সে সে মুখ দেখেছি দাদুভাই, মনে হয় সেই মুখ আর কেউ দেখেনি। সে-মুখ ভোলবার নয়। চুপি চুপি বলি, তোমার বউয়ের ওপর আমার দুর্বলতা আছে যদিও, কিন্তু যার কথা বলছি তার মতো দ্বিতীয় একখানা মুখ এত বয়সেও আর চোখে পড়ল না। কত কাল, কত যুগ তো হয়ে গেল, তবু ওই মুখের বয়েস বাড়ল না। ঠিক তেমনি তাজা, আর তেমনি সুন্দর। চোখ বুজে যত দেখি তত সুন্দর লাগে। “...হ্যাঁ, তার আর এক রূপও চেষ্টা করলে মনে করতে পারি। সেও সুন্দর বটে। কিন্তু সে-মুখ বিসর্জনের মুখ। তাই শেষের সেই ছবি আমি মন থেকে হেঁটে সরিয়ে দিয়েছি। সেটা যে এক দুঃস্বপ্নের ছবি! দুঃস্বপ্ন কে মনে করে রাখতে চায় বলো। আমি শুধু ওই আগের রূপ লালন করেছি, পালন করেছি। তার সেই রূপই তো তুমি ফেরাবে কথা দিয়েছ। আত্মজন মরে গেলে লোকে পিণ্ডি দেয়, তর্পণ করে। দাদুভাই, আমার সেই বিচিত্র মায়ের তর্পণ আজও হল না। তোমার ভিতর দিয়ে আমি শুধু সেই তর্পণের তোড়জোড় করে গেলাম। তুমিও যদি শেষ করতে না পারো তোমার ছেলেকে ভার দিয়ে যেও। মোট কথা, সেই রূপের বংশ আর রূপ ফলাবে, রূপ ফেরাবে—তখন মা যা ঘোষণা করেছিল তাই সত্যি হবে। সত্যি হবে যে, করণের পাপ আমার মায়ের পাপ নয়। সত্যি হবে যে, উল্টে আমার মায়ের পুণ্যে করণের পাপ মুছবে একদিন । “দাদুভাই, এযাবৎ লক্ষ কথার বুনটে মুড়ে আমার সেই রূপবতী মা-কে তোমার চোখের সামনে হাজির করতে চেষ্টা করেছি। তুমি কখনো হেসেছ, কখনো ভেবেছ দাদুটা পাগল। কিন্তু দেখতে যে পাওনি, জানি। আমার বিশ্বাস একদিন পাবে। যে-দিন মনে হবে করণের আকাশে হাসি লেগেই আছে, যেদিন মনে হবে করণের গাছে পাতায় মাটিতে বাতাসে প্রাণের খেলার জোয়ার নেমেছে, যেদিন দেখবে করণে আর শুকনো কিছু নেই—বন-জঙ্গল, খাল-বিল, পথ- ঘাট, ঘর-বাড়ি সব আবার জীবন্ত নতুন হয়ে উঠেছে, আর, যেদিন দেখবে করণের মানুষগুলোর চোখে মুখে কারণে-অকারণে খুশির আলো ঠিকরে পড়ছে—আর, করণের এত রূপ দেখে যেদিন তোমার চোখে পলক পড়বে না—তখনই জেনো, আমার মা ফিরেছে, আমার সেই রূপসী মাকেই দেখছ তুমি। ‘আর, এ যখন দেখবে, তখনই দেখবে আমার মা-ও তোমার দিকে চেয়ে হাসছে মিটিমিটি।'.... ট্রেনটা ঢিমেতালে চলেছে। এ-পথে লোকাল ট্রেনগুলো এভাবেই বুড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগোয় কলকাতা থেকে আড়াই ঘণ্টার রাস্তা মাত্র। কিন্তু তাতেই ক্লান্তি এসে যায়। এ-সব গাড়িতে ফার্স্ট ক্লাসের খদ্দের হয়ই না বড়। কামরাটাতে হাত-পা ছড়িয়ে বসন্ত ঘোষাল একা চলেছেন।
Ashutosh Mukhopadhyay was born in 1920 in Bajrajogini, Dacca (now Dhaka). He graduated in commerce from Hooghly Mohsin College, then affiliated with the University of Calcutta. His first story was Nurse Mitra, published in the newspaper Basumati, which was later made into major movies (Deep Jwele Jai in Bengali and Khamoshi in Hindi). He has also written stories for films like, Safar (1970) and Bemisal. His first novel was Swaha, also published in Basumati and later renamed as Ruper Hate Bikikini. He joined the newspaper Jugantar in 1955 and subsequently became the head of the Sunday special of the newspaper. Ashutosh Mukhopadhyay was one of the most cinematised authors of Bengali literature. Some of the movies made from his stories and novels are listed below. Many of his novels have been translated in other Indian languages. Love and romance and the human relationship are recurring themes of his novels. He died in 1989.