ভুটানকে সে দেশের অধিবাসীরা আদর করে ডাকে “ড্রাক-ফুল”— বজ্র ড্রাগনের দেশ বলে। কিন্তু পুরো ভুটান ঘুরে কোথাও আগুন উদ্গীরণকারী বজ্র ড্রাগনের দেখা পাওয়া গেল না। সারা ভুটান মন্দ্রিত বৌদ্ধ-মঠের বুদ্ধ-মন্ত্র আর ঘন্টাধ্বনিতে। ভুটান এখন শান্ত ড্রাগনের দেশ। হাজার দুয়েক বছরের পুরোন সভ্যতা 'ভোট-স্থান' ভুটানের প্রথম পাঁচশো বছরের সভ্যতা অন্ধকারাচ্ছন্ন। তারপর একটু একটু করে গড়ে উঠেছে এক অনন্য সভ্যতা - সম্পূর্ণ নিজস্ব এক অনন্য-সাধারণ সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতি বৌদ্ধ-ধর্মকে অবলম্বন করে গড়ে উঠলেও পরবর্তীকালে পেয়েছে এক সম্পূর্ণ নিজস্ব ও অনন্য চেহারা। সে সংস্কৃতি আর ইতিহাস সযত্নে লালিত হয়েছে রাজানুগ্রহে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভুটানের রাজাদের মত রাজা বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ রাজার মত প্রজা কল্যাণকারী রাজা পাওয়া ভার। এই গ্রন্থে ভুটানের পর্যটক-দ্রষ্টব্য স্থান প্রসঙ্গে অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে এসেছে ভুটানের পুরাণ-ইতিহাস, সংস্কৃতি, লোকাচার, লোককথা। লেখকের পরিক্রমা শুরু হয়েছে ভারত-ভুটান সীমান্তের ফুন্টশোলিং দিয়ে। শেষ হয়েছে পশ্চিম-ভুটানের চীন সীমান্তের হা, পারো হয়ে থিম্পু, পুনাখা, টোংসা, মধ্য ভুটানের বুমথাং ঘুরে পূর্ব-ভুটানের মঙ্গার, লুনৎসে, ত্রাশিগাঙ পার করে আসাম সীমান্তের সামদ্রুপজঙখার হয়ে ভারতে। দুই মলাটের মধ্যে সমগ্র ভুটান।
Chinmoy Chocroborti-এর প্রধান পরিচয়, তিনি চারণিক। ভ্রমণের নেশা তার রক্তে। সে নেশার টানে পাহাড়ে-পর্বতে, সমুদ্রতটে, অরণ্যে আর চেনা-অচেনায় তাঁর পদচারণা। ভ্রমণ-প্রেমী পাঠকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য বছর কুড়ির। আনন্দবাজার, দৈনিক বর্তমান, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, স্টেটস্ম্যান, টেলিগ্রাফ সংবাদ পত্রে; সাপ্তাহিক বর্তমান, ভ্রমণ, তথ্যকেন্দ্র, সুখীগৃহকোন ইত্যাদি পত্রিকায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হিমালয়ান জার্নালে, স্বর্ণাক্ষর প্রকাশিত সেরা ভ্রমণ কাহিনী ১ ও ২ সংকলনে তাঁর লেখার সঙ্গে সুধী পাঠকের নিবিড়পরিচয়। তিনি পাঠককে উপহার দেন অজানা দেশ, অচেনা মানুষ, মোহময়ী প্রকৃতি – ভ্রমণের স্বাদু রোমাঞ্চে। তাঁর ভাষার যাদুতে, ক্যামেরার লেন্সে ধরা থাকে অপূর্ব অভিজ্ঞতার অমূল্য চিত্র। ভ্রমণ তাঁর সত্ত্বার সঙ্গে এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে তাঁর ভ্রমণ কাহিনীর সূত্র ধরে অনায়াসে চলে আসে সে সব জায়গার ইতিহাস, ভূগোল, পুরাণ আর লোককথা। চলে আসে তার সমৃদ্ধ পঠন-পাঠন, অভিজ্ঞতা আর পরিবেশ-ভাবনা। চলে আসে ভারী সহজ ভঙ্গিতে, গল্পের টানে। “তীর্থ হিমালয়”, “তিব্বত সীমান্তের পথে”, “অরণ্যের টানে’ গ্রন্থে পাঠকের সঙ্গে তাঁর বারবার দেখা। পেশায় প্রশাসক, নেশায় চারণিক লেখকের এবারের পথচলা ভুটানের পথে পথে।