"জিন্না পাকিস্তান/নতুন ভাবনা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: জিন্না – সমগ্র ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতাআন্দোলনের ইতিহাসে এক বহু বিতর্কিত নাম। পাকিস্তানে যিনি জাতির জনক রূপে পূজিত, ভারতবাসী তাকে এ শতাব্দীতে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রবলতম প্রবক্তা ও ভারতবিভাজনের কারণ মনে করেন, এই বাদ-বিবাদের কুজ্বাটিকার অন্তরালে জিন্নার আসল ভূমিকা কি? কংগ্রেস নেতা দাদাভাই নৌরজীর সচিব ও মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সময়ে তার সঙ্গে আদর্শগত কারণে অসহযােগকারী, গােখলে ও সরােজিনী নাইডু কর্তৃক “হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের রাজদূত” রূপে অভিনন্দিত, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা, জিন্না কেন মুসলিম লীগের কর্ণধার হয়ে শেষ অবধি পাকিস্তানের একমেব প্রবক্তা হয়ে উঠলেন ? পাকিস্তান দাবির প্রথম প্রবক্তা কে এবং জিন্না গােড়ায় এর প্রতি উদাসীন হলেও শেষ অবধি তার নেতৃত্ব, ধৈর্য ও রাজনৈতিক কুশলতার জন্য কংগ্রেস, ইংরেজ সরকার --সবার বিরােধিতা সত্ত্বেও কি ভাবে মাত্র সাত বছরের মধ্যে অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠল? ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের গোঁড়ামিমুক্ত জিন্না কি সত্য সত্যই ভারত ভাগ করে পাকিস্তানের মতাে ধর্মীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি চেয়েছিলেন? সিপাহীবিদ্রোহ-উত্তর মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদ ও পাশ্চাত্য শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা এর পিছনে কতটা? যে ঐতিহাসিক ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় এক শ’ কোটি নর-নারীর জীবন, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থব্যবস্থাকে আগামী কয়েক শতাব্দী সর্বাধিক প্রভাবিত করবে তার অন্যতম প্রধান নায়ক জিন্নার জীবন ও কৃতি সম্বন্ধে তথ্য-সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক আলােচনা করা হয়েছে লেখকের সুদীর্ঘ বিশ বৎসরের অধ্যয়ন ও গবেষণার ফসল এই গ্রন্থে।
১৯২৬ খ্রি. ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে জন্ম। স্কুল-পর্ব শেষ হবার পরই ১৯৪২ খ্রি. “ভারত ছাড়” আন্দোলনে যোগদান ও দু'বার গ্রেপ্তার। ১৯৪৪ খ্রি. টাটানগরে রেলওয়েতে কর্মের সঙ্গে সঙ্গে জনসেবার জীবনের সূত্রপাত। ১৯৪৬ খ্রি. বিহারের বিখ্যাত কংগ্রেস ও শ্রমিক সঙ্ঘের নেতা অধ্যাপক আবদুল বারীর প্রেরণায় চাকরি ছেড়ে পূর্ণ সময়ের কংগ্রেস কর্মী হিসাবে পল্লী সংগঠনে আত্মনিয়োগ। ১৯৫১ খ্রি. রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে সেবাগ্রামের মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত চরখা সঙ্ঘে যোগদান। ১৯৬১ খ্রি. ভারত সরকারের খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশন কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ১৯৮৪ খ্রি. অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামীণ জনতার কর্ম সংস্থানের উদ্যোগে নেতৃত্বদান। এর পর ২০০১ খ্রি. পর্যন্ত গান্ধীপন্থায় গঠনকর্মের সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান দিল্লীস্থ “গান্ধী স্মারকনিধি”-র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন। ২০০৬-১১ খাদি গ্রামোদ্যোগ কমিশনের পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য। বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিতে মৌলিক রচনা, অনুবাদ ও সংকলন নিয়ে প্রায় চল্লিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত । আনন্দ পুরস্কার, বাংলা আকাদেমি, বিশ্বভারতী, গজেন্দ্রকুমার মিত্র ট্রাস্ট, পুণের “গান্ধী রাষ্ট্রীয় স্মরক সমিতি” ও ঢাকার “স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ” প্রমুখের পুরস্কার ছাড়াও জনসেবার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক “পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত।