ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের কিছু পত্রপত্রিকায় গল্প লিখলেও এই প্রথম ঢাকা থেকে আমার গল্প সংকলন প্রকাশিত হলো। এ কাজে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন তরফদার প্রকাশনীর পক্ষে মাহবুব আলম। তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার এই বইটির ভূমিকা লিখে দিতে অনুরোধ করেছিলেন ড. অশোক মিত্রকে। ড.মিত্র ভারতীয় উপ-মহাদেশে একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবেই শুধু পরিচিত নন, শিল্প সাহিত্য -কবিতার আলোজনায় তার মননশীলতার সুতীব্র আলোকছায়াটায় আমরা আলোকিত ও সমৃদ্ধ হবার সুযোগ পাই। তার সৃজনশীল রচনাবলী সামজিক দায়িত্ববোধের প্রতীক হয়ে ওঠে আমাদের কাছে । তার সুতীক্ষ্ণ লেখনি একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের সুপ্ত বিবেককে নাড়া দেয়। তিনি সম্ভবত কাজের চাপের মধ্যেও সোৎসাহে আমার বইয়ের ভূমিকা দিখে দিয়েছেন। আমার পিতৃতুল্য এই মানুষটির হে ছায়ার কথা বিস্মৃত হবার নয়।সর্বোপরি বাংলাদেশের অগনিত পাঠকপাঠিকাকে আমি আমার সহৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে আদাব এবং নমস্কার জানাই। আমার লেখা যদি আপনাদের মনে প্রত্যন্ত কোণে একটুও অনুকরণ তুলতে পারে, তাতেই আমি অসম্ভব খুশি হয়ে উঠতে পারি।
সূচিপত্র * খুঁজতে খুঁজতে তোমাকে পেলাম * জন্মকথা * প্রকৃতি কন্যা * আকাঙ্খা * দিবাকারের দ্বিতীয় সন্তান * সরীসৃপ * কী করে দাঙ্গা লাগলো * জান্তর * রিয়াজ সাদ্দাম বিরোধী ছিলো * তিনি যখন দামী লেখক
ভূমিকা বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের সম্মানিত সদস্য। পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্য । তবু রাজনীতি ও ভৌগলিক সীমান্তের বাধাবন্ধন পেরিয়ে একটি মস্ত মিলন সূত্র বিরাজমান।আমরা একই ভাষায় কথা বলি । স্বপ্ন দেখি। পরস্পরের বিনিময় -প্রতিবিনিময়ে নিযুক্ত হই। নিজের ভাষার সঙ্গে যে কোনো মানুষের চেতনা ও সংবেদনশীলতার নিবিড়িতম সম্পর্ক থাকে। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। মাতৃভাষা থেকে নির্বাসিত হলে পরিমাণে আমাদের টিকে থাকা সম্ভবপরতার বাইরে।
অথচ এমনই পরিতাপের কথা ,দুই বাংলায় মাতৃভাষায় যে সাহিত্যজচর্চা হচ্ছে সবসময়ে, তা খবরাখবর সীমান্ত ডিঙিয়ে তেমন একটা পৌঁছায় না। বাংলাদেশের বাঙালিয়া যেমন অনেক ক্ষেত্রে জানতে পারেন না, কোন ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে বিকশিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষও বাংলাদেশের সাহিত্যকীর্তি নিয়ে সমপরিমাণ অজ্ঞ এবং সে জন্যই আমি গভীর তৃপ্তি ও সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা বোধ করছি যে, বাংলাদেশের এক সম্মানিয় প্রকাশক ঘনশ্যাম চৌধুরীর একটি গল্প সংগ্রহ ‘ দিগন্তের সীমা নেই’ ঢাকা থেকে প্রকাশ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
ঘনশ্যামা চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য অঙ্গনে তার গল্প -উপন্যাস সমূহ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের জন্য একটি বিশেষ জায়গা রচনা করে নিয়েছেন। তার দেখবার আলাদা ভঙ্গি মনকে আকর্ষণ করে। সেই সঙ্গে বিষয়বস্তুর মৌলিকতা পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চল;বিশেষ করে আদীবাসী -অধ্যুসিত কয়লাখনি -অয়ণ্যানী জড়িত যে ঊষর ব্যাপৃত ভূখন্ড, তার দরিদ্রতম মানুষজনদের হাসিকন্না-অভিমান-আনন্দ ,অভিশাপ-দু:স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে কাহিনী নিয়ে কাহিনী চয়ন করেছেন। তার সৃষ্টি প্রতিভা বিষয়বস্তুর বিন্যাসকে স্পষ্টতর ও স্বচ্ছতর করেছে। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে চিরন্তর দ্বন্দ্ব মিল রহস্য ,তা নিয়েও তিনি কাহিনী রচনা করেছেন। মানব মনের নানা জটিল রসায়নও তিনি সংহত ভাষায় সাজিয়ে তুলেছেন তার গল্প উপন্যাসে । সব মিলিয়ে একটু অন্য স্বাদের ,অন্য ভবের রচনা সমাহার ঘনশ্যাম চৌধুরীর গল্পে খুঁজে পাওয়া যায়।
আমি আশা করবো ,বাংলাদেশের পাঠককুলের কাছে তার রচনাদি যথাযোগ্য মর্যদা পাবে। উদ্যমী প্রকাশককে আমি আরো একবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। ড. অশোক মিত্র
ঘনশ্যাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১লা অক্টোবর। কলকাতায় জন্ম হলেও শৈশব থেকে কিশােরকাল কেটেছে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায়। লেখকের পরিবারের আদি নিবাস অখণ্ড বাংলার । ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের রাজানগর গ্রামে। অবিন্যস্ত জীবনে ঘনশ্যাম চৌধুরীর পড়াশােনা গুপ্তিপাড়ার মীরডাঙা প্রাইমারি স্কুল, গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পরে উত্তর কলকাতার সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশন এবং তারও পরে বর্ধমান জেলার পূর্ব সাতগাছিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পারিবারিক কারণেই তার পড়াশােনার মাঝে মাঝে ছেদ ঘটে ও স্কুল বদল করতে হয়। পড়াশােনা চলাকালীনই চলতে থাকে জীবনসংগ্রাম। কলকাতায় বিদ্যাসাগর সান্ধ্য কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পড়াশােনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই গল্প-উপন্যাস লেখার পাশাপাশি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। এম এ পাশ করার পর লেখক একটি বিশিষ্ট বাংলা দৈনিকে সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত হন। তখন থেকেই তার জীবনপ্রবাহ অন্যদিকে মােড় নেয়। এরপর শুধুই বড়দের নয়, শিশু-কিশােরদের জন্যও লিখতে শুরু করেন ঘনশ্যাম চৌধুরী। গােয়েন্দা রহস্য কাহিনি ছাড়াও তিনি কল্পবিজ্ঞানের গল্প, রূপকথার গল্প লিখে সমসময়ের সাহিত্যে অন্য স্বাদ নিয়ে আসতে পেরেছেন। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস ‘অবগাহন’ মল্লভূম পুরস্কার পায়। পুণ্যিবালা গল্প সংকলনের ‘পুণ্যিবালা’ গল্প অবলম্বনে বেতার নাটক। আকাশবাণীর সর্বভারতীয় প্রথম পুরস্কার পায় ২০০৪ সালে। বাংলাদেশের ঢাকা থেকেও তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা ছােটদের বই রূপকথার ঝাপি, সােনারঙের দিন, আনন্দ রূপকথা। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কয়লাখনি অঞ্চলের জীবন নিয়ে তার দু’টি গল্প সংকলনে ব্রাত্য মানুষজনের। প্রতি লেখকের অকৃত্রিম দরদ উপলব্ধি করা যায়।