তাঁর জন্ম ১৯৬৩-এ, মামাবাড়িতে। কিশোরগঞ্জস্থ বাজিতপুর থানার সরিষাপুর গ্রামে শৈশব-কৈশোর, যৌবনের প্রাথমিক পর্যায় কাটান তিনি। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করেছেন গ্রাম ও গ্রামঘেঁষা শহরে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা করেন চট্টগ্রামে। লেখাজোখা তাঁর কাছে অফুরন্ত এক জীবনপ্রবাহের নাম। মানুষের অন্তর্জগতে একধরনের প্রগতিশীল বোধ তৈরিতে তাঁর আকাক্সক্ষা লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জায়গায় - ছোট বা বড়কাগজে তিনি লিখে যাচ্ছেন। কথাসাহিত্যের ছোটকাগজ কথার সম্পাদক। কমলকুমার মজুমদার ছিলেন লেখকদের লেখক। এ কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল বহু বছর আগে। তাঁর গদ্য নিয়ে, বাক্যবিন্যাস নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তাঁর সৃজনে, বিশেষত উপন্যাস ও ছোটগল্পে ফরাসি বৈদগ্ধ্যের, ভাষারীতির ছাপ থাকলেও আদ্যন্ত বাংলা এবং বাঙালির জীবনের নানা অনুষঙ্গকে গভীর বোধে তিনি বহুমাত্রা নিয়ে ছুঁয়ে ছিলেন। তাঁর ভাষা কখনো-সখনো পাঠককে প্রহত করলেও তাঁর কথাসাহিত্যের বিষয় হয়ে আছে জীবনের নানা দিক, যা ক্লেদ, ঘৃণা, দুঃখ, যন্ত্রণা, প্রেম-অপ্রেম উন্মোচনে বহুবর্ণিল ও বহুকৌণিক। কমলকুমার মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই গ্রন্থে বিরলপ্রজ এই লেখকের সৃজনভাবনা ও সৃষ্টির উদ্যান নিয়ে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কমলকুমারকে পাঠ করা মানে কথনশিল্পের নবতর এক ধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়া - এক নিঃসঙ্গতার দাপটকে বুঝতে পারা। কমলকুমার একটা নাম মাত্র নয়, কথাশিল্পের একটা ইতিহাস সৃজনকারী। সেই ইতিহাসে আলাদা একটা ভাষা আছে, আড্ডামুখর চরিত্র আছে, শিল্পসংস্কৃতির চরিত্রসমূহকে চিহ্নিত করার নিজস্ব কৌশল আছে। তাঁর আছে ভালোবাসা, শিল্পের প্রতি নিগূঢ় টান। তিনি একা যেন সেই ধারায় থাকতে চান না। কিন্তু তাঁর বলার ধরনটা এমন যে তাঁকে একা একাই কূলকিনারা পাড়ি দিতে হয়। কথাশিল্পের চলতি ধারাকে তিনি মান্য করতে চাননি, - কথনশিল্পে তিনি নিজের একটা মেজাজ, সত্য, রুচি নির্মাণ করে গেছেন। কথনশিল্পের উপনিবেশ-মানসকে তছনছ করে উপনিবেশ-উত্তর দেশজ সাহিত্যময়তাকে লালন করেছেন। দেশজ লৌকিকতাতে নিজের ধারায়, স্বশাসিত ভাষায়, এমনকি কথনের ইউরোপতার বদলে আমাদের নিজস্ব মেজাজ বের করায় সচেষ্ট থেকেছেন। তবে তা ছিল একান্তই কমলের; যা অতীব জটিল। ছোটকাগজের দ্রোহমুখর প্রবণতাকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের সাহিত্যজগতের আলাদা সত্তা যেন। এ লেখক কমলকুমারের সার্বিক সাহিত্য-প্রবণতা, অবস্থান, মানসিকতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। কমলকুমারের মতো জটিল লেখককে পাঠ করার জন্য, তাঁকে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় এক গ্রন্থ হয়ে থাকবে তা।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জন্ম- ১৯৬৩ ইং মামাবাড়িতে। কিশােরগঞ্জের বাজিতপুর থানার সরিষাপুর গ্রামে শৈশব-কৈশাের, যৌবনের প্রাথমিক পর্যায় কাটান তিনি। স্কুল-কলেজের পড়াশােনা করেছেন গ্রাম ও গ্রামঘেঁষা শহরে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একাডেমিক পড়াশােনা করেন চট্টগ্রামে। লেখা-জোখা তাঁর কাছে অফুরন্ত। সর্বআনন্দব্যাকুল এক জীবন প্রবাহের নাম । মানুষের অন্তর্জগতে এক ধরনের প্রগতিশীল বােধ তৈরীতে তাঁর আকাঙ্খর বিষয়টা লক্ষ্য করা যায় । বিভিন্ন জায়গায় ছােট বা বড়ােকাগজে তিনি নিয়মিত লিখে গেছেন। কথা সাহিত্যের ছােট কাগজ কথা’র সম্পাদনা ছাড়াও জীবদ্দশায় প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘মৃতের কিংবা রক্তের জগতে আপনাকে স্বাগতম' (জাগৃতি প্রকাশনী), ‘স্বপ্নবাজি’ (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ), কতিপয় নিম্নবর্গীয় গল্প' (শুদ্ধস্বর), উপন্যাস ‘পদ্মাপাড়ের দ্রৌপদী (মাওলা ব্রাদার্স), যখন তারা যুদ্ধে’ (জোনাকী) এবং অন্যান্য গ্রন্থ ‘উপন্যাসের বিনির্মাণ, উপন্যাসের জাদু (জোনাকী), ‘কথাশিল্পের জল হাওয়া (শুদ্ধস্বর), ‘ভালােবাসা সনে আলাদা সত্য রচিত হয়’ (জোনাকী) বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ৭ মার্চ ২০১৫ অকালে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান । ‘হৃদমাজার’ (অনুপ্রাণন) তাঁর মৃত্যু পরবর্তী অপ্রকাশিত লেখাগুলাের মাঝে প্রথম উপন্যাস। -অনুপ্রাণন প্রকাশন