বাংলার আকাশ সমুদ্রসীমা আজ সম্পূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যেন বাংলাদেশের মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিজয়ের স্বাদ নিতে পারছে না। কি যেন নেই, যার দরুণ কেউই ঢেকুর তুলে বিজয়ের স্বাদ খুশি মনে নিতে পারছে না। কর্তা যদি বাড়ির বাহিরে থাকে, পোলাও মাংস যতই খাওয়া হোক না কেন, সেগুলো খেতে ভাল লাগবে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের অভিভাবক পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। অভিভাবক ব্যতীত বাঙালি জাতি বিজয় উৎযাপন করে কিভাবে! সকলের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলা হচ্ছে। অবশেষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সব ধরণের জল্পনা-কল্পনা-চালাকির অবসান হয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়েছেন। আয়েশা অভাবের তাড়নায় তিন বছরের শিশুপুত্র জামালসহ তিন সন্তানের জনক কদম আলীকে বিয়ে করে। শারীরিকভাবে অক্ষম সতীন নার্গিস প্রথমে আয়শাকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে চায়নি। পরবর্তীতে সংসারের যাবতীয় কাজের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ায় শত ইচ্ছার বিরুদ্ধে থেকেও আয়শাকে নার্গিস নিজের সতীন হিসাবে মেনে নেয়। বিয়ের পর থেকে আয়শা কদম আলীর সংসারে দিন-রাত চাকরাণীর মতো খেটে যেতে থাকে। নার্গিসের বড় দুই ছেলে স্কুলে পড়তে দেখে জামালেরও স্কুলে পড়ার ইচ্ছা জাগে। আয়শা অনেক অনুনয়-বিনয় করে নার্গিসকে রাজি করিয়ে জামালকে স্কুলে ভর্তি করে। জামাল নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করে এবং প্রতিবছর একটি একটি ক্লাস উর্ত্তীন হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। দুজনেই দুই মেরুর হওয়া সত্ত্বেও উভয়েই প্রেম, বিয়ে ও সংসার জীবনে যারপরনাই সূখী হয়। কিন্তু সময়ের প্রয়ােজনে প্রতিটি মানুষ যেভাবে বিন্দু বিন্দু করে তার প্রকৃত সহজাত হিংস্র রূপ ধারণ করে, ঠিক তেমনিভাবে ইকবাল ও সালমার জীবনেও তা দেখা দেয়। আর এর পরিণতি হলাে, উভয়ের মধ্যে চিরতরে বিচ্ছিন্নতাবােধ । অতঃপর এ বিচ্ছিন্নতাবােধকে ব্ল্যাকমেইল করে স্বার্থ হাসিল করতে চায় ধুরন্ধর নারী কোহিনূর। কিন্তু বিধিবাম! ইকবালের কঠোর অবস্থানে তা ভেস্তে যায়। এখানেও আসে বিচ্ছিন্নতাবােধ। এভাবে উপন্যাসের কাহিনি এগােতে থাকে দুই নারীর হিংস্রতাকে অতিক্রম করে। অতঃপর ন্যায় ও সত্যের বিজয় নিশ্চিত করে ইকবাল নামের মূখ্য চরিত্রটি। এটাই হলাে প্রকৃতির প্রতিশােধ। এই অদৃশ্য দিকটিকে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তুলেছেন।
Saadat Al Mahmud- ভিন্নধারার কথাসাহিত্যিক। তিনি এক নভেম্বর ১৯৭৬ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের ডুবাইল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মু. আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে স্কুল শিক্ষক পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে অবসরে যান। মাতা গৃহিণী। ছয় ভাই-বোন এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তার লেখা গল্প-উপন্যাস-শিশুতোষ পড়লে তাকে একজন লেখার জাদুকর বললে বেশি বলা হবে না। কথাসাহিত্যিকের পাশাপাশি তিনি নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক। তিনি দৈনিক মুক্তকন্ঠ, নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব, সমকাল, ঢাকা ট্রিবিউন, সকালের খবর, বর্তমান, প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশের খবর ও দেশ রূপান্তর পত্রিকায় বিভিন্ন সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত দৈনিক খোলা কাগজ ও পরিবর্তন ডটকমে মহাব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘চিতার আগুনে’ উপন্যাসটি সাদত আল মাহমুদের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। তার একাধিক প্রকাশিত জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে ইতিহাস ভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস যথাক্রমে এক আনা মন ও রাজাকারকন্যা, প্রসব বেদনা, রমনীদ্বয় অন্যতম। তার প্রতিটি উপন্যাসের নামকরণ অদ্বিতীয় ও আকর্ষণীয়। তিনি শিশুদের জন্য লিখেছেন ভৌতিক গল্প ‘ভূত ধরার অভিযান’ ও শিশুতোষ ‘গগেনদার গল্পের ঝুড়ি’ বইটি।