বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণনা নিয়েই গ্রন্থটির সূচনা। বাংলা ভাষা ও জাতি এক ধরনের ঐক্য তৈরি করলেও পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য পরস্পরকে স্বতন্ত্র করে রেখেছে।
পূর্ববঙ্গে কৃষি নির্ভর জীবন একটি উপজাপালিক চেতনাকে বিকশিত করেছিল। ইতিহাসের জটিল স্রোতে এ চেতনা কখনই বিলুপ্ত হয়নি বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে, আবেগ ও ভালবাসায় সিক হয়ে ১৯৫২-১৯৭১ কালপর্বে বাঙলি জাতীয়তাবাদের মহাসমুদ্রে মিলিত হয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গে অনন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম হয়, যার অমোঘ পরিণতি ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
ইতিহাসের ক্রমধারা অনুধাবনের জন্যে এখানে আলোচিত হয়েছে। দেশ ও জনগোষ্ঠির পরিচয়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্ভব ও বিকাশ, অনন্ত বাংলা গঠনের প্রয়াস, পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বৈষম্য, ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা, সামরিক শাসন, জাতীয়তাবাদের বিকাশ, স্বাধিকার আন্দোলন, সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, অসহযোগ আন্দেলন ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ, বাংলাদেশের মৃত্যুদয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল।
আশফাক হােসেন জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৯, মৌলভীবাজার শহরে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশােনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমফিল পর্যায়ে গবেষণার বিষয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ । লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও স্কটল্যান্ডের জেমস্ ফিলে আর্কাইভসে সংরক্ষিত মূল দলিলপত্রের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঔপনিবেশিক বিশ্বায়ন বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের সিসিপি প্রেস থেকে প্রকাশিত স্টাডিজ ইন পােস্ট কালচার কনফ্লিক্ট জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছে। গবেষণার জন্য ইউজিসির রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত বিচারপতি ইব্রাহীম স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ আটটি, গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. হােসেন বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ (ডেপুটেশন)।