মুসলিম লীগরূপী ভগ্নস্তূপের এই মাল-মশলা নিয়ে জিন্না এক নূতন ইমারৎ তৈরি করার কাজ শুরু করলেন। লক্ষ্য— প্রাদেশিক আইনসভাসমূহের আগামী নির্বাচনে মুসলমানদের এক শক্তিশালী মিলিত ফ্রন্ট খাড়া করা, যাতে ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় মুসলমানদের যথাযোগ্য স্থান থাকে এবং তার বলে যাতে মুসলমানরাও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে উপনীত হতে পারেন। বোম্বের লীগ অধিবেশনেই তাই স্থির হল যে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচ চালাবার জন্য ৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হবে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লীগের জন্য তরুণ স্বেচ্ছাসেবক সংগৃহীত হল। এ প্রচেষ্টা অসহযোগ আন্দোলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বয়কটের দ্বারা গান্ধীর কংগ্রেসে নূতন রক্ত আমদানির চেষ্টা এবং তিলক স্বরাজ্য ফান্ডের জন্য ১ কোটি টাকা সংগ্রহের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া লীগের ঐ অধিবেশন থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠল। কংগ্রেস ও রাজনীতিকে জনমুখী করার গান্ধীর প্রয়াসের সঙ্গে রুচিতে না মেলা অভিজাত জিন্নার ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার অন্যতম কারণ। জিন্না অতঃপর বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে গান্ধীর সেই পথই গ্রহণ করলেন। লাহোরে শহীদগঞ্জ মসজিদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মুসলিম জনসাধারণের সঙ্গে জিন্নার যে প্রথম পরিচয়, বোম্বে অধিবেশন এবং তারপর তা ক্ৰমশ দৃঢ় হতে হতে পরবৎসর লখনউ-এর লীগের বাৎসরিক অধিবেশনে জিন্না একরকম গণনায়কের ভূমিকা গ্রহণ করলেন, যদিও তা বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের।
১৯২৬ খ্রি. ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে জন্ম। স্কুল-পর্ব শেষ হবার পরই ১৯৪২ খ্রি. “ভারত ছাড়” আন্দোলনে যোগদান ও দু'বার গ্রেপ্তার। ১৯৪৪ খ্রি. টাটানগরে রেলওয়েতে কর্মের সঙ্গে সঙ্গে জনসেবার জীবনের সূত্রপাত। ১৯৪৬ খ্রি. বিহারের বিখ্যাত কংগ্রেস ও শ্রমিক সঙ্ঘের নেতা অধ্যাপক আবদুল বারীর প্রেরণায় চাকরি ছেড়ে পূর্ণ সময়ের কংগ্রেস কর্মী হিসাবে পল্লী সংগঠনে আত্মনিয়োগ। ১৯৫১ খ্রি. রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে সেবাগ্রামের মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত চরখা সঙ্ঘে যোগদান। ১৯৬১ খ্রি. ভারত সরকারের খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশন কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে ১৯৮৪ খ্রি. অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামীণ জনতার কর্ম সংস্থানের উদ্যোগে নেতৃত্বদান। এর পর ২০০১ খ্রি. পর্যন্ত গান্ধীপন্থায় গঠনকর্মের সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান দিল্লীস্থ “গান্ধী স্মারকনিধি”-র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন। ২০০৬-১১ খাদি গ্রামোদ্যোগ কমিশনের পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য। বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিতে মৌলিক রচনা, অনুবাদ ও সংকলন নিয়ে প্রায় চল্লিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত । আনন্দ পুরস্কার, বাংলা আকাদেমি, বিশ্বভারতী, গজেন্দ্রকুমার মিত্র ট্রাস্ট, পুণের “গান্ধী রাষ্ট্রীয় স্মরক সমিতি” ও ঢাকার “স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ” প্রমুখের পুরস্কার ছাড়াও জনসেবার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক “পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত।