"আন্তন চেখভের নাটক" বইয়ের পেছনের কভারে লেখা: ১৭ জানুয়ারি, ১৮৬০ সালে আন্তন পাভেলবিচ চেখভ দক্ষিণ রাশিয়ার অ্যাযব নদীর তীরবর্তী তাগানাগা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে আন্তনের অবস্থান তৃতীয়। বাবা প্যাবেল ইয়াগােরবিচ এবং মাতা ইবজেনিয়া মােরযােভা। ১৮৭৯ সালে নিজের শহর তাগানাগের মিউনিসিপ্যালিটির বৃত্তি নিয়ে ডাক্তারি পড়তে মস্কো পাড়ি দেন। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। এ সময় টলস্তয়ের নীতিবােধ তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। জীবন ও সমাজ নিয়ে চেখভ নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। সামাজিক অবক্ষয় এবং নিগৃহীত ও নিপীড়িত মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা চেখভের সাহিত্যকর্মে বিবৃত হতে থাকে। চেখভের প্রতিটি গল্পেই রয়েছে বাস্তবতার ছোঁয়া। প্রথমদিকের গল্পগুলােয় নিছক কৌতূহল প্রকাশ ও লঘু আচরণের প্রবণতা থাকলেও পরের গল্পগুলােতে জীবনের গভীরতম দিক ফুটে উঠেছে, যা আজ সারা বিশ্বে নতুন এক ফর্মের সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি গল্পের আখ্যান আলাদা আলাদা এবং প্রতিটি গল্পে জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতির কথা প্রকাশিত হয়েছে। শােষণভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় সমাজের উচ্চবিত্ত মহলের নির্মমতা এবং অবিবেচনা ও নিম্নবিত্ত মহলের প্রতি অবজ্ঞার বিরুদ্ধে তার প্রতিটি গল্পেই আছে। বিদ্রুপের সেই কটাক্ষ, যা পাঠকের মনে ভীষণ অভিঘাতের সৃষ্টি করে তুলে ধরে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, সেই চিত্র আজও বহমান ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নাট্যকার চেখভের বাল্যকাল থেকেই নাটকের প্রতি ভালােবাসার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অভিনেতা হিসেবেই প্রথম তার মঞ্চের সাথে যােগাযােগ ঘটে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নাটক রচনায় মনােযােগী হয়ে পড়েন। বেশকিছু একাঙ্ক নাটক উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যেতানিয়া, ভালুক, প্রস্তাব এবং প্রতিশােধ উল্লেখের দাবি রাখে। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে আধুনিক নাটকের পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। চেখভই প্রথম নাট্যকার, যিনি নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানারকম বিচ্যুতি, অবক্ষয়, অনাচার, অস্বস্তিকর পরিবেশ পাঠক এবং দর্শকের সামনে জোরালাে ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন। তাই বিশিষ্ট মঞ্চ পরিচালক তবস্তনােগভ তাঁকে। মনে করেন বিংশ শতাব্দীর নাট্যরীতির কলম্বাস। তার উল্লেখযােগ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটকগুলাের মধ্যে তিন বােন, সী-গাল, আঙ্কেল ভানিয়া, চেরী অর্চার্ড, আইভেনভ বিশেষভাবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৮৯২ সালে চেখভ ফুসফুসের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং ১৯০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
ড. ইনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর ২০০৯ সালে অধ্যাপক। হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বিভাগীয় প্রধান, ডীন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সিন্ডিকেট মেম্বার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মেম্বার ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিলেকশন কমিটির সদস্য হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমী কাউন্সিল মেম্বার, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির চেয়ারম্যানসহ অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, নাট্য সংগঠক ও নাট্যাভিনেতা। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশনে নির্দেশক, অভিনয়, নাট্যকার ও উপস্থাপক হিসাবে কাজ করে আসছেন। ছাত্র জীবনেই তিনি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা দুই হাজারের উপরে। তার নির্দেশিত উল্লেখযােগ্য মঞ্চ নাটক হচ্ছে চিরকুমার সভা, বিবাহ উৎসব, জনতার রঙ্গশালা, বৈকুণ্ঠের খাতা, খােলস ইত্যাদি। মঞ্চে অভিনীত নাটকগুলাের মধ্যে রক্তকরবী, মুক্তধারা, বিসর্জন, জনতার রঙ্গশালা, নূরুলদীনের সার জীবন, অচলায়তন, সরমা উল্লেখযােগ্য। শিক্ষকতা ও নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাচসাস পুরস্কার, বুয়েট অফিসার্স অ্যাসােসিয়েশন পুরস্কার, ধারা স্বর্ণপদক পুরস্কার, ট্র্যাব পুরস্কার, মুক্তিযােদ্ধা সংসদ পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সভাপতি, নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা এর অধ্যক্ষ, ষান্মাসিক নাট্যপত্র ‘শুধু নাটক’ এর সম্পাদক এবং ই.ই.সি.পি’র উপদেষ্টা মণ্ডলীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।