ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন (১৭০৭-১৯৪৭) : ১৭০৭ সালে ভারতের শেষ এবং শ্রেণ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু ভারতের মুসলমানদের জীবনে নিদারুণ অমানিশার যুগের সূচনা করে। একদিকে মারাঠা শক্তির উত্থান, শিখ সম্প্রদায়ের নব বলে বলীয়ান হওয়া অপরদিকে নবাগত ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ভারতের মুসলমানদের সামনে বিভীষিকায় দণ্ডায়মান হয়। অসহায় মুসলমানদের উদ্ধারে এগিয়ে আসবে এরূপ কোনো শক্তি তখনকার ভারতে ছিল অকল্পনীয়। এ পরিস্থিতিতে ১৭৬১ সালে আহমদ শাহ আবদালী মারাঠাদেরকে শোচনীয়ভঅবে পরাজিত করলেও তাদেরকে ধ্বংস করতে পারেন নি। মুঘল রাজশক্তি তখন এত দুর্বল ও অসহায় যে অচিরেই তাঁরা ইংরেজ পক্ষপুটে নিজেদের নিরাপদ ভারতে থাকেন। উনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্রমশ মারাঠা, শিখ এবং মুসলমান সবার উপর নিজেদের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয়। এহেন পরিবেশে মুসলিম সমাজে দিল্লীর শাহ ওয়ালীউল্লাহর (১৭০৩-১৭৬২) আবির্ভাব ঘটে। মাসুলমানদেরকে তিনি আত্মশুদ্ধির উপদেশ দেন। ক্ষয়িঞ্চু মুঘল রাজ দরবারে বিজাতীয় সংস্কৃতির আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ্ এই ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম সমাজের মধ্যে সংস্কারের বীজ বপন করেন। তাঁর চিন্তাধারা পুত্র শাহ আবদুল আজিজের মাধ্যমে সৈয়দ আহমদ ব্রেলবীতে এসে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা করে-
বিদেশী ইংরেজদের তাড়েয়ে এদেশে পুনরায় ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষেমুজাহিদ বাহিনীর সমস্ত ক্রিয়াকর্ম পরিচালিত হয়। ১৮৫৭ সালে হিন্দু-মুসলিম যৌথভাবে পরিচালিত প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে তাহের সেকেলে অস্ত্রশস্ত্র অকেজো প্রমাণিত হয়। অতঃপর মুসলমানদের এক অংশ দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে দীনি শিক্ষা চালিয়ে যায়, অপরদিকে চোরাগোপ্তা সশস্ত্র হামলার দ্বারা ইংরেজদের ব্যতিব্যস্ত রাখে। মুসলমানদের অপর অংশ তখন ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে তারা মুসলিম লীগ (১৯০৬) প্রতিষ্ঠা করে। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইতোমধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা (১৮৫৬) করে নিজেদের দাবি-দাওয়া পুরণের চেষ্টা চালায়। ১৯১৬ সালে লক্ষ্নৌ চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পুনরায় উনিশমত ত্রিশের দশকে এদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ আরম্ভ হয়। অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা বনাম বিভক্ত বা পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ বিভক্ত হয়ে যায়; পরিণতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ইউনিয়ন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মা্ধ্যমে ইংরেজরা এই উপমহাদেশ ত্যাগ করে।
সূচিপত্র * ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপমহাদেশে মুসলিম জাগরণ ও আন্দোলন * মুসলমানদের প্রতি ব্রিটিশ মনোভাব এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া * মুসলিম মানসে নবচেতনার উন্মেষ * বাংলা মুসলিম জাগরণ * রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব * বঙ্গভঙ্গ রদ ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি * ব্রিটিশ শাসনামলে বেসামরিক ও রাজস্ব পরিচালনা এবং সাংবিধানিক পরিক্রমা * নেহরু রিপোর্ট ও সাম্প্রদায়িক জটিলতা * শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া * বাংলায় রাজনৈতিক জাগরণ * পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি
ড. ইনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর ২০০৯ সালে অধ্যাপক। হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বিভাগীয় প্রধান, ডীন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সিন্ডিকেট মেম্বার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মেম্বার ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিলেকশন কমিটির সদস্য হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমী কাউন্সিল মেম্বার, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির চেয়ারম্যানসহ অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, নাট্য সংগঠক ও নাট্যাভিনেতা। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশনে নির্দেশক, অভিনয়, নাট্যকার ও উপস্থাপক হিসাবে কাজ করে আসছেন। ছাত্র জীবনেই তিনি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা দুই হাজারের উপরে। তার নির্দেশিত উল্লেখযােগ্য মঞ্চ নাটক হচ্ছে চিরকুমার সভা, বিবাহ উৎসব, জনতার রঙ্গশালা, বৈকুণ্ঠের খাতা, খােলস ইত্যাদি। মঞ্চে অভিনীত নাটকগুলাের মধ্যে রক্তকরবী, মুক্তধারা, বিসর্জন, জনতার রঙ্গশালা, নূরুলদীনের সার জীবন, অচলায়তন, সরমা উল্লেখযােগ্য। শিক্ষকতা ও নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাচসাস পুরস্কার, বুয়েট অফিসার্স অ্যাসােসিয়েশন পুরস্কার, ধারা স্বর্ণপদক পুরস্কার, ট্র্যাব পুরস্কার, মুক্তিযােদ্ধা সংসদ পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সভাপতি, নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা এর অধ্যক্ষ, ষান্মাসিক নাট্যপত্র ‘শুধু নাটক’ এর সম্পাদক এবং ই.ই.সি.পি’র উপদেষ্টা মণ্ডলীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।