আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের ওপর নির্মোহ গবেষণার জন্য সূচনালগ্ন থেকে তার মূল দলিলসমূহের অধ্যয়ন বিশেষভাবে জরুরি। কিন্তু সেসব খুব একটা সহজলভ্য নয়। তাই একাডেমিক গবেষণার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারে এমন কিছু দলিল এ সংকলনে গ্রন্থবদ্ধ করা হল। এখানে পাকিস্তান-পর্বের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দলিল ছাড়াও নেতাদের নীতিনির্ধারণী কয়েকটি ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা আওয়ামী লীগের আদিপর্বের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক (অসাম্প্রদায়িক নীতিসহ) ও পররাষ্ট্র নীতির বিশ্লেষণে অত্যন্ত জরুরি। সংকলনের প্রথম দলিল ১৯৪৯ সালে প্রদত্ত আওয়ামী লীগের প্রথম ঘোষণাপত্র এবং শেষ দলিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চ ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ভাষণ। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১, মোটমাট এই দীর্ঘ বাইশ বছরের দলিলপত্র এক করার মাধ্যমে এখানে আওয়ামী লীগের একটি দালিলিক ইতিহাসও নির্মাণের চেষ্টা লক্ষণীয়। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের আকাক্ষা পূরণের লক্ষ্যে প্রায় বিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে যে জটিল পরিবর্তন-বিবর্তন ঘটে চলছিল, তা দলিলগুলো থেকে সম্যকভাবে অনুধাবন করা যাবে। সংকলনটিকে অপেক্ষাকৃত পূর্ণাঙ্গ করে তোলার জন্য দুর্লভ দলিলপত্রের পাশাপাশি কয়েকটি বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত দলিলও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে সংকলনের অধিকাংশ দলিলই আপাতভাবে জনসাধারণের সামনে সুলভ নয়। গ্রন্থটি যেমন আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের প্রয়োজন মেটাবে, তেমনি এই বিষয়ে আগ্রহী পাঠকেরও কাজে লাগবে। দলিলগুলো পড়লে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াটি জানা-বোঝা যাবে। একই সাথে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও ভাবাদর্শিক বিকাশও পাঠকের সামনে পরিস্ফুট হবে। বলা ভালো, মূলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার স্বার্থে দলিলগুলোর আদি বানান ও ভাষাভঙ্গি এ বইতে সম্পূর্ণভাবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
Title
মুক্তিসংগ্রামে আওয়ামী লীগ : দালিলিক ইতিহাস (১৯৪৯-১৯৭১)
আবুল কাশেম আবুল কাশেম জন্ম ১৯৬০ সালে, বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের নয়াগোলায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল নিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে এমএ পাস করেন ১৯৮২ সালে। ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন অধ্যাপক ড. অমলেন্দু দে-র অধীনে, ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস প্রশাসন) নিয়োজিত ছিলেন অল্প কিছু সময়ের জন্য (১৯৮৬)। সিভিল সার্ভিস ছেড়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। ওই বিভাগের সভাপতি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। গবেষণার মূল ক্ষেত্র, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ তাঁর পঠন-পাঠনের বিষয়। সম্পাদিত গ্রন্থ : বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও আওয়ামী লীগ : ঐতিহাসিক দলিল (২০০১)।