এক বোহেমিয়ান যুবক আমি। নির্দিষ্ট কোন ঘর বা দরজা নেই আমার। পুরো পৃথিবীই আমার ঠিকানা। আমি একদিন হাঁটা শুরু করি শাহবাগ মোড় থেকে, উদ্দেশ্য প্যারিস। দু'দিন বাদে আমি ভুলে যাই আমার গন্তব্য। ছুটে ফিরি আরেক পথে। অপরিচিত হোক, তবুও মনে হয় সে পথ আমার, এপথেই আমার ঠিকানা। অজানা পথে নিরুদ্দেশ হাঁটি আমি। ক্লান্তিহীন পা আমার একসময় থেমে যায়। ভুলে যাই আবার; আমি কেন এসেছিলাম এইপথে, এখানেই বা কেন এসেছি। একবার সন্ধ্যা আসে, অন্ধকারে হাঁটি আমি। পৃথিবীর স্তব্ধতার সাথেসাথে গাঢ় হয়ে উঠে সন্ধ্যের আলো। আমার সখ্যতা বেড়ে উঠে প্রকৃতির সাথে । মনে হয় আমি হাঁটছি দু'পা, কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি চার পা। মাথায় ঝিমঝিম হয়, দেহ টলমল করে। ঘুমঘুম লাগে খুব। তবুও আমি হাঁটি। হাঁটতেই থাকি অবিরাম । হাঁটতে গিয়ে টের পাই আমার ঘুম ভেঙেছে। আমি গাছের শিকড়ে মাথা রেখে শুয়ে আছি। আমার চোখ আকাশের দিকে। শিমুল তুলার মতো সাদা আকাশ। না সরি। আকাশ নীল হয়ে আছে। রোদে ঝকঝক করছে। কোথাও থেকে তাড়া আসে; আবার হাঁটতে হবে। আমি উঠে দাঁড়াই, আর হাঁটতে থাকি । আচ্ছা এমনও তো হতে পারতো; আমার একটা ঘর-পরিচয় আছে। আমিও মানুষের মতো চাল-ডালের সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকি। হুটহাট মন খারাপ হয়- মেজাজ গরম হয়- কাউকে রাগ দেখাই- তোষামোদে উত্যক্ত করি। একটা ডায়েরি আছে আমার। আমি দিনলিপি লিখে রাখি রোজরোজ। আমারো থাকুক কিছু পিছুটান, কিছুটা মায়া। আমিও ব্যস্ত থাকি সংসারের রোজগার নিয়ে। কারো অসুখে বেড়ে উঠুক আমার অস্বস্তি। এখান থেকে ওখানে বাসে, রিক্সায় ছুটে চলি। ঘামে কপাল ভিজুক, পিঠ ভিজে পাঞ্জাবীটাও লেপ্টে থাকুক। প্রায়ই তরকারীতে খুব বেশি ঝাল হোক, লবন না পড়ুক, ভাত পুড়ে যাক, আমি একটা মানুষকে একটু ঝেড়ে বলি- ‘এই ভাত কোন মানুষ খেতে পারে?' তারপর খেতেখেতে একটা আড়ষ্ট মুখ দেখে ভুলে যাই এই তরকারি
সাজ্জাদুর রহমান, পিতা: মোঃ সাহিদুর রহমান, মাতা: শাহানারা রহমান। জন্ম: ১২ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানাধীন ধোকড়াকোল গ্রামে। ২০০৬ সালে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে ব্যবসস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ব্যাংকার হিসাবে পেশাগত জীবনে পর্দাপন। স্কুল জীবন থেকেই সংস্কৃতি তথা সাহিত্য চর্চার সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে কবিতার সাথে সখ্যতা। লেখালেখিতে অনিয়মিত হলেও কবিতা লিখি শখের বশে, নিজস্ব ভাবনা ও কল্পনার আত্মপ্রকাশের জন্য, মাঝে মাঝে সময় কাটানোর জন্য লিখি। রাখাল যেমন সময় কাটাতে বাঁশি বাজায়, পোষ্ট মাষ্টার যেমন সময় কাটাতে পান চিবায় ও পত্রিকা পড়ে, কিশোর-কিশোরী যেমন রসায়ন বইয়ের উপর আনমনে আঁকিবুকি করে, আমিও সেরকমই লিখি। আমি কোনো কবি নই।