ফারজানা আহমেদের গল্পসমগ্র `মেঘহাঁস ও অন্যান্য গল্প’ একটি উজ্জ্বল গল্পগ্রন্থ। গল্পগুলোর চরিত্রে আনন্দ আছে, বেদনা আছে, ভীতি আছে, বর্বরতা আছে, নৃসংসতা আছে; প্রকৃতি আছে, প্রেম আছে; আছে নগ্নতাবাস্তবতা; প্রাণীকূল আছে, শকট আছে, আছে অপরাধচক্র। নানা গল্পে অসহায় মানুষের সূচীমুখ বিবরণ ছড়িয়ে আছে। রয়েছে স্বপ্ন-কল্পনায়-রোমন্থনে শৈশব-কৈশোর-যৌবনের কথা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সর্বকূলপ্লাবী একটি উন্মুখ-উৎসুক অভিমুখ আছে মানবতার দিকে। দুঃখ-বেদনার অবসান ঘটানোর আর্তি আছে, প্রচেষ্টা আছে। সর্বোপরি আছে মমতা-মাখানো, সহানুভূতিসিক্ত লেখকবৃত্তি। সম্ভবত এটাই ফারজানা আহমেদের গল্পসমগ্রের মর্মকথা। সহজ-সরল ভাষায়, পরিচ্ছন্ন বিবরণে, কৌশলী উপস্থাপনায় গল্পগুলি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। গল্পপাঠে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় তাতে জাগে জীবনবোধ—দীপ্র হয়ে ওঠে আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সমাজের দুঃখী এবং নিপীড়িত মানুষেরা যে এখনো সংগ্রামে লিপ্ত আছে একটি অপেক্ষাকৃত সুষম সমাজের জন্য—সেসব কথা। কাজেই, গল্পলেখক ফারজানা আহমেদ এমন একজন কথা সাহিত্যিক যিনি মনে-মননে-জীবন চেতনায় মানবিক, দেশপ্রেমিক আর মুক্ত সমাজের স্বাপ্নিক। এরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গী যে কোনো শিল্প সাহিত্যকে একটি ঔদার্য প্রদান করে, যা এই গল্প সমগ্রেও প্রস্ফুটিত হয়েছে।—আফজালুল বাসার
ফারজানা আহমেদ জন্ম ও লেখাপড়া ঢাকায়। বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ (প্রকৌশলী)। মা সায়েরা আহমেদ (গৃহিনী)। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। লেখাপড়া শেষ করে আট বছর একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ফারজানা আহমেদ বাফা থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে সার্টিফিকেট পান। তিনি কয়েকটি গানের স্কুলে গান শেখাতেন। স্কুল জীবনে তিনি নিয়মিত রেডিও টিভিতে গান করতেন। ছােটবেলা থেকেই তিনি লেখালেখি করতেন, তবে সেটা ছিল নিভৃতে। কয়েক বছর হয় ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন। লেখিকার লেখা সবাই প্রশংসা করাতে লেখিকা উৎসাহিত হয়ে নিয়মিত লিখতে থাকেন। এই বই প্রকাশের জন্য সেই সব ফেসবুক বন্ধুদের অনুপ্রেরনা অনেকখানি। এই পর্যন্ত লেখিকার কবিতা ও গল্প বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলাে হলদৈনিক প্রথম আলাে, দৈনিক ট্রাইবুনাল, সকালের আলাে অনলাইন পত্রিকা, অভিযাত্রী, সমধারা, আলাের দিগন্ত, আত্মকথা, আরও বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও মাসিক সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুক গ্রুপ দুই বাংলার কবি ও কবিতা’সহ বিভিন্ন গ্রুপে লেখিকার গল্প, কবিতা প্রচুর সেরা নির্বাচিত হয়েছে। ফারজানা আহমেদের প্রিয় সখ ছবি তােলা। তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘শ্যামলী পাইয়নিয়ার রােটারেক্ট ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা ছিলেন। ফারজানা আহমেদের একমাত্র মেয়ে সৈয়দা আবিদা রােজা, স্বামী সৈয়দ আহমদ শরীফ একজন ব্যবসায়ী। লেখিকার দাদা খন্দকার আলাউদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন শিক্ষক ও লেখক। উনার লেখা ‘পূর্ববঙ্গের সমাজ ও সংস্কৃতি' একটি সমাজ ইতহাসের হন দলিল।