নিজের যৌবন আর স্বামীর জীবন দিয়ে স্বাধীনতার বীজ রচনা করেছি। আজও শরীরে গরম রডের ছেঁকা চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে আছে । খালেকের বন্দিশালায় শত শত নারীর আর্তচিৎকার এখনও কানে বাজে। বাঙ্কারে বাঙ্কারে অসংখ্য নারী বিবস্ত্র অবস্থা পড়ে তাঁদের ঠোঁট, মুখ, স্তন, যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত। বুকে পিঠে নখের আঁচড়, দাঁতের কামড়। সমস্ত শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। এত নির্যাতনের পরেও আমরা মুখ খুলতে পারিনি অপবাদ আর ঘৃণার ভয়ে। চোখের সামনে বাপ ভাইকে মেরেছে। আত্মীয় স্বজনের লাশ শিয়াল। কুকুরে ছিড়ে খেয়েছে। নদীর স্রোতে ভেসে গিয়েছে। একবার ছুঁয়েও দেখতে পারিনি। মা, বোন, চাচী, ফুফু সবাই একে অপরের সামনে সম্ভ্রম হারিয়েছি। কিছুই করতে পারিনি। সেদিন কত শত নারীর আর্তনাদ মিলিয়ে গেছে হাওরের বাতাসে। কত দেহ তলিয়ে গেছে জলের গভীরে। সেই সব স্মৃতি আজও আমাদের ঘুমাতে দেয় না। আমরা ঘুমাতে পারি না। পাকসেনা তথা দেশের রাজাকারদের হাতে আমরা মান হারিয়েছি। রাজাকাররা একাত্তরেও যেমন প্রভাবশালী ছিল এখনও তেমনই আছে। রাজাকারদের বিচার হলে অন্তত স্বাধীন দেশ অভিশাপ মুক্ত হত। আমরাও শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। এমনই কিছু দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেছেন সর্বস্ব হারানো বীরাঙ্গনারা।
আনোয়ারা খাতুন এর জন্ম ১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার টিকুরিয়া গ্রামে। কর্মজীবনে তিনি আইন পেশাকে বেঁচে নিয়েছেন। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ আর্তনাদ (২০২০) প্রকাশ করেছে প্রতিভা প্রকাশ। লেখনির বিষয়-অবহেলিত সমাজের নারী ও শিশুদের নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। একাত্তরের নির্যাতিত কিশোরীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ ‘একাত্তরের কিশোরী’, ২০২১, প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ। তিনি বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। প্রতিনিয়ত বাংলার একপ্রান্থ থেকে আরেক প্রান্থে ছুটে চলেছেন বীরাঙ্গনার খুঁজে। গবেষণার পাশাপাশি লিখছেন, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনী। সাহিত্যের সকল শাখা বিচরণ করছেন গুণি এই লেখক। সম্পাদনা করেন, লিটলম্যাগ ‘অঙ্গজা’। তাঁর নেশা বই পড়া ও লেখা। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের টেনে তুলে বিশ্ব দরবারে সম্মান প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর লেখার মূল উদ্দেশ্য। আজীবন লেখালেখির মধ্যে ডুৃবে থাকতে চান।