"নয়ন রহস্য" বইয়ের ভিতরের অংশ থেকে নেওয়া: ফেলুদারা গিয়েছে সুনীল তরফদার নামক এক তরুণ জাদুকরের শো'তে। সেই জাদুকর তার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিল। কিন্তু এর চেয়েও একটা বড় চমক অপেক্ষা করছিল। দর্শকের সামনে সে হাজির করল জ্যোতিষ্ক নামক এক অসাধারণ ছেলেকে। যাকে সংখ্যার সাথে সংস্লিষ্ট যেকোন প্রশ্ন করা হলেই সে তার উত্তর দিয়ে দিতে পারে। এটি দেখে ফেলুদা পর্যন্ত থ বনে গেল। ফেলুদা সুনীল তরফদারকে কথা দিল যে জ্যোতিষ্কের ব্যাপারে কোন সময়া হলে তাকে যেন জানানো হয়। এছাড়াও সে সুনীলের কাছ থেকে জেনে নিল জ্যোতিষ্কের আসল নাম-পরিচয়। জানা গেল, ছেলেটির আসল নাম নয়ন, বাড়ি কালীঘাট। পরদিনই ফোন এল সুনীলের কাছ থেকে। নয়নের ব্যাপারে আগ্রহী চারজন লোকের সাথে এপয়েন্টমেন্ট হয়েছে। তাই সে চায় যাতে ফেলুদা, তোপসে আর জটায়ুও সেখানে উপস্থিত থাকে। ফেলুদারা গেল সেখানে চারজন চার রকম স্বভাবের মানুষ এল নয়নের সাথে দেখা করতে। তাদের প্রত্যেকেই নিয়ে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব। কিন্তু একদিক থেকে তাদের মধ্যে মিল আছে। তারা চারজনই খুব লোভী। সুনীল তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। ফলে তারা চারজনই শাসিয়ে গেল সুনীলকে, হুমকি দিল নয়নের ক্ষতি করার। ওএই দেখে সুনীল ফেলুদাকে অনুরোধ করল তাদের সাথে মাদ্রাজ যেতে। কারণ, নয়নকে নিয়ে সে মাদ্রাজে যাচ্ছে শো করতে। ফেলুদা এরই মধ্যে আরও একটা কেস হাতে পেলহিঙ্গোয়ানি নাম করে এক লোক দাবি করছে, তার পার্টনার তাকে মিছিমিছি ফাসানোর চেষ্টা করছে এবং তার প্রাণের ভয়ও আছে। এই লোকও যাবে মাদ্রাজে। তাই ফেলুদা তার নিরাপত্তার দায়িত্বও নিল। মাদ্রাজে গিয়েই বোঝা গেল, কোলকাতায় থাকতে যারা নয়নের পিছে লেগেছিল, তারা মাদ্রাজ পর্যন্তও হানা দিয়েছে। এদের থেকে নয়নকে বাঁচাতে সচেষ্ট হল ফেলুদা। অন্যদিকে জানা গেল, হিঙ্গোয়ানি নামে যে লোকের কেস হাতে নিয়েছে ফেলুদা, সে আসলে সুনীলেরই স্পন্সর। যাইহোক, রহস্য ঘনীভূত হল যখন নয়ন উধাও হল আর হোটেলে নিজের রুম থেকে খুন হল হিঙ্গোয়ানি। এই দ্বৈত রহস্যে প্রথমে ফেলুদাও চমকে গিয়েছিল। কিন্তু সে তার মগজ খাটিয়ে বের করল, অপরাধী আসলে এমন একজন ব্যক্তি যে শুরু থেকেই তার চোখে ধুলো দিয়ে যাচ্ছিল এবং যাকে অপরাধী বলে মনেই হয় না। কিন্তু শেষমেষ ধরা পড়ল সে।
সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন অসম্ভব গুণী এই মানুষটি। ১৯২১ সালে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা। ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ বা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’র জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যার মধ্যে অন্যতম হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। তবে তাঁর কাজের সমালোচকও কম ছিলো না। এসব সমালোচনার উত্তরে লেখা দুটি প্রবন্ধ পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায় এর বই ‘বিষয় চলচ্চিত্র’-তে। কল্পকাহিনী ধারায় সত্যিজিৎ রায় এর বই সমূহ জয় করেছিলো সব বয়সী পাঠকের মন। তাঁর সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র ‘ফেলুদা’, ‘ প্রফেসর শঙ্কু’ এবং ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত। একের পিঠে দুই, আরো বাড়ো এমন মজার সব শিরোনামে বারোটির সংকলনে লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর বই সমগ্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘একেই বলে শ্যুটিং’, আত্মজীবনীমূলক ‘যখন ছোট ছিলাম’ এবং ছড়ার বই ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একাডেমি সম্মানসূচক পুরষ্কার' (অস্কার) প্রাপ্তি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।