শান্তিদেব ঘোষ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের নিকটতম । শিষ্যদের অন্যতম । তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে কিছু অমূল্য ররে সমাহার “স্মৃতি ও সঞ্চয়।” গ্রন্থটি তিনভাগে বিভক্ত। ১৯৮৫ সালে আলাপচারিতার সুরে শান্তিদেব যে স্মৃতিচারণ করেন সেটি রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৫০ মিনিটের সেই রেকর্ড গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সময় এবং তার পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটকের ধারার বিষয়ে নানা মূল্যবান তথ্য এবং বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ। এটি গ্রন্থের প্রথম ভাগ । যাঁরা নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা করেন এই গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশ তাঁদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এযাবৎ অপ্রকাশিত পাঁচটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথের সুরারোপিত একটি সংস্কৃত মন্ত্র শান্তিদেবের সংগ্রহে ছিল । এছাড়াও ছিল একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের (বিশ্ববিদ্যা তীর্থ প্রাঙ্গণ) অপ্রচলিত সুর। সেই সাতটি গানের স্বরলিপি এখানে প্রকাশিত হ'ল। শেষ বয়সে শান্তিদেব এই গানগুলির কয়েকটি রেকর্ড ক'রে যান, সেগুলি একটি CD-তে এই গ্রন্থে সংযোজিত করা হ'ল। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে থাকাকালীন শান্তিদেব অত্যন্ত যরে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে লেখা চিরকুট, অনুষ্ঠানসূচী, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সংগ্রহ থেকে কিছু নমুনা ও কয়েকটি মূল্যবান আলোকচিত্র এই গ্রন্থের তৃতীয়ভাগে রইল । শান্তিদেবের হাতের লেখায় “আমরা না গান গাওয়ার দল” রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপির একটি পৃষ্ঠাও এই অংশে দেওয়া হ'ল।
জন্ম : ২৪ বৈশাখ, ১৩১৭ বঙ্গাব্দ। পিতা—স্বদেশকর্মী ও শ্রীনিকেতনের রূপকার কালীমোহন ঘোষ, মাতা—মনোরমা দেবী। এক বছর বয়স থেকে শান্তিনিকেতনে। সেখানেই বিদ্যালয়শিক্ষা। শিশুবয়স থেকেই সংগীতে স্বাভাবিক-অনুরাগ ও শক্তিমত্তার পরিচয়, ফলে রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে সংগীতশিক্ষার সুচনা। হিন্দুস্থানি সংগীত শেখেন ভীমরাও শাস্ত্রীর কাছে। ১৯৩০ সালে বিশ্বভারতীর সংগীতশিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে সংগীতভবনের পরিচালক, ১৯৪৫-এ অধ্যক্ষ। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর ১৯৫৪-তে রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্যের প্রধান অধ্যাপকের দায়িত্ব পান। ১৯৬৪-৬৮ এবং ১৯৭১-৭৩, দু’বার বৃত হন সংগীতভবনের অধ্যক্ষপদে। ১৯৭৪-এ অবসর। এরপর দু’বছর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রূপে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গবেষণার কাজ। ১৯২৬ সাল থেকে সংগীতের পাশাপাশি নৃত্যচর্চারও সূচনা। গুরুদেবের ইচ্ছানুসারে ১৯৩১-এ দক্ষিণ ভারতে কথাকলি নাচ শিখতে যান। ১৯৩৭-৩৯ সালে ক্যাণ্ডি ও জাভাবালীর নৃত্য শিখতে যান সিংহল, বর্মা ও ইন্দোনেশিয়ায়। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁর বিভিন্ন নাটকের অভিনয়ে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি, নৃত্যনাট্য প্রযোজনাতেও হয়ে ওঠেন গুরুদেবের প্রধান সহায়ক। বহু সম্মানভূষিত জীবন। ১৯৭৭-এ সংগীত নাটক আকাদেমির ফেলো। ১৯৮০ সালে সুরেশচন্দ্র-স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার। ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণ ১৯৮৪। ওই বছরই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত দেশিকোত্তম। রচিত গ্রন্থাদির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য : রবীন্দ্রসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত বিচিত্রা, Music and Dance in Rabindranath Tagore's Educational Philosophy. সহধর্মিণী : শান্তিনিকেতন কারুসংঘের অন্যতম শিল্পী ইলা ঘোষ।