“সুপুরুষ” বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া জীবন এক দুর্দান্ত ধাবমান অশ্ব। ছুটে চলে দ্রিম দ্রিম দিকবিদিক। রেখে যায় ধুলাের শিরস্ত্রাণ। ঔপন্যাসিক রােজী রহমানের উপন্যাস ‘সুপুরুষ’ পাঠ করে মনে হয়েছে, এ জীবন মহাজীবনের দ্রাক্ষারসে পরিপূর্ণ। উপন্যাসের নায়ক মাহাবুব। মাহাবুবকে ঘিরে মা জাহানারা, বড় ভাই মনােয়ার, মনােয়ারের স্ত্রী সবিতা এবং কাজের মেয়ে শারমিন। মনােয়ার প্রভু। শারমিন ভৃত্য কিন্তু নারী, আছে শরীর। সেই শরীরের গন্ধে মনােয়ার যখন ডুব দেয়, ধরা পরে মা জাহানারার কাছে। তিনি পিস্তল নিয়ে পুত্রকে গুলি করেন। যে পিস্তল কিনে দিয়েছিল স্বামী। জাহানারা হাসপাতালে লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে। মনােয়ারকে নিয়ে যায় মাহাবুব মরা নদীর পারে, উচিয়ে ধরে পিস্তল, খুন করার অভিলাষে। কিন্তু পারে না। মনােয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, নতুন জীবনের। মানুষের জীবন তাে একটা লটারি। সেই লটারির জোয়ারে ভেসে চলে রােজী রহমানের উপন্যাস ‘সুপুরুষ’। এতােকিছু ঘটছে উপন্যাস জুড়ে মাহাবুব একা কেনাে? কেনাে বিয়ে করছে না? অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে পত্রিকার খবরে পড়ে রােহিঙ্গাদের মর্মরিত দুঃখ বেদনার লড়াই। পড়তে পড়তে সরকারি কাজে সেই রােহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে কাজ করার সুযােগ আসে মাহাবুবের। আর সেখানেই খুলে যায় মাহাবুবের একটি রুদ্ধ কিন্তু আকুল গন্ধমাখা দুয়ার। দুয়ারের নাম জয়ীতা। জয়ীতার জীবনে মাহাবুব অথবা মাহাবুবের জীবনে জয়ীতা কী নতুন কোনাে গন্ধবগান তৈরি করবে? নাকি বিরহের অকুল দরিয়ায় স্মৃতির পাল তুলে ভেসে যাবে? মানবিকবােধে, প্রেমে, শঠতায়, সংসারের যাতনায়, ভালােবাসার পদ্মপুরাণে আমরা প্রতিদিন যে জীবন যাপন করি, তারই মােহগন্ধ আখ্যান তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক রােজী রহমান ‘সুপুরষ’ উপন্যাসে। আমার বিশ্বাস, রুচিদগ্ধ পাঠকের অবশ্যই তৃপ্তি দেবে, দেবে পাঠ সুখ।
রােজী রহমান। পিরােজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার পৈকখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন। খুলনা শহরে। শৈশব, কৈশাের আর যৌবনের কিছু সময় কাটিয়েছেন এখানে। লেখাপড়া করেছেন । ইংরেজি সাহিত্যে। খুলনা বিএল কলেজে। ব্যক্তিগত জীবনে চাকুরির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। শখ ভ্রমণ আর পৃথিবীর পাঠশালা থেকে পাঠ। তাঁর উপন্যাসগুলাে : অদিতি (২০১১), জয়িতা (২০১২), পাশবিক (২০১৪), সুপুরুষ (২০২০)।