বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর আমি প্রথম লিখেছিলাম ইংরেজী সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায়। তারপর থেকে ভারতের ওপর আমি অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছি যেগুলি আমার বিভিন্ন বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পূর্বে গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত ভারতের ওপর কিছু প্রবন্ধ এই সংকলনটিতে অন্তর্ভুক্ত হলো। মাসিক সংস্কৃতিতে ভারতের ওপর যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি পৃথকভাবে এখানে এই সংকলনের প্রথম অংশে দেওয়া হলো। এছাড়া দৈনিক সংবাদপত্রগুলিতে আমি যা লিখেছি সেগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো দ্বিতীয় অংশে। এই দ্বিতীয় অংশে মনমোহন সিং এর কংগ্রেস সরকার এবং বিশেষতঃ নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার আমলে ভারতে যা ঘটেছে এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যেভাবে কার্যকর হয়েছে তার ওপর রাজনৈতিক প্রয়োজনে আমাকে অনেক লিখতে হয়েছে। *** বদরুদ্দীন উমর ভারত প্রসঙ্গে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। এখন এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। এই মধ্যবর্তী সময়ে ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ও তাদের রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), তাদের পিতৃ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আর.এস.এস) ও তার ঘরাণার দল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, শিব সেনা ইত্যাদি একেবারে খোলাখুলি মুসলমান ও খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে বিশেষতঃ মুসলমানদের বিরুদ্ধে এখন এক আক্রমণ পরিচালনা করছে। উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, কর্ণাটকে এই আক্রমণ এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাবাহিক বিকাশ ঘটেই যে ভারতে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই দ্বিতীয় সংস্করণে তিনটি নোতুন প্রবন্ধ সংযোজিত হলো যেগুলি সংস্কৃতি’তে প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যেন কংগ্রেস থেকে বিজেপি শীর্ষক রচনাটি From Congress to Bharaiya Janata Party নামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Frontier পত্রিকায় বিগত অক্টোবর মাসে। এই রচনাটি এ বইয়ের পরিশিষ্ট’ অংশে দেওয়া হলো। ***
বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিম বাঙলার বর্ধমান শহরে। মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ, প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি বাঙলাদেশে সুপরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশ করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে এম. এ. পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্ৰী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। ষাটের দশকে প্রকাশিত তাঁর তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) তত্ত্বকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তাঁর বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।