সাঈদা আজিজ চৌধুরীর দ্বিতীয় কবিতার বই- ভালোবাসার লাইব্রেরি। সাঈদা চৌধুরীর কবিতার সাথে সংসার আবাল্য।সামাজিক নানা অভিঘাত, দোলাচল তাকে আন্দোলিত করে। প্রেম, বিরহ, সংগ্রাম, গা গঞ্জ, লোকাচার সভ্যতা তিনি ছুঁয়ে ছেনে দেখতে চান।তার চারপাশের জগৎ তাকে অস্থির করে তোলে।প্রকৃত কবির থাকে বিষ্মিত করার ক্ষমতা। পাঠক আশ্চর্য আনন্দে ঐশ্বরিক সত্তার সঙ্গে একাত্ব হয়।অরাগঁ বলেন- কবিকে প্রতিটি শব্দে রক্ত ঝরাতে হয়।জন ডান বলছেন- কবিতার প্রথম লাইন দেয় ঈশ্বর বাকি চরণগুলো কবিকে লিখতে হয়। বহুদিন থেকে কবিতার বিরুদ্ধে দুর্বোধ্যতার অভিযোগ পাঠকের। এমনকি রবীন্দ্রনাথও এ অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকেননি। প্রত্যেক পাঠকের অনুভবের জগত ভিন্ন।এজন্য নিটশে বলছেন- একটা কবিতার যতগুলো পাঠক তার অর্থ ততগুলো। আমরা জীবনের চাওয়া- পাওয়াকে কবিতার শব্দে গেঁথে রাখতে চাই।সব অনুভব শব্দে বাঁধা যায় না।তবু এই অসহায়ত্ব মেনে কবি কবিতা লেখেন।সাইদা আজিজ চৌধুরীর কবিতার অন্তর্গত সত্য হলো মানব প্রেম।ব্যষ্টি থেকে ব্যষ্টিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের প্রচেষ্টা কবিকে পাঠকপ্রিয়তা দেয়।আমরা যদি উদাহরণে যাই, তার কবিতার কয়েকটি লাইন- এই প্রেম ভালোবাসা, মহাকাব্য রচনা লালনের মহাকথা- দিকভ্রান্ত পথচারী ধোঁয়াশা, রহস্য উপাত্ত - অব্যক্ত ব্যথা। (লিপিবদ্ধ পুস্তক) পুস্তক থেকে আহরিত জ্ঞান মানুষকে দিশা দিলেও পথ তাকে তৈরি করে নিতে হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাস রক্তের।কবি সকল দুঃসময় আকণ্ঠ পান করেন আর নতুন স্বপ্ন নিয়ে হাজির হন- কবির সামনে মানুষ থাকে সদা জাগ্রত মানবপ্রেম, কবির প্রতিটি উচ্চারণ -শুদ্ধ সঙ্গীত সাম্য সম্প্রতির। ( কবি) কবি সব সময় উচ্চকণ্ঠ হবেন, কবি কি কবিতায় সমাজ বদলের কথা বলবেন, কবিতায় কি প্রেমের কথা বলবেন - এসব জিজ্ঞাসার জহলবাবে জীবনানন্দের মতো বলতে হবে কবিতা অনেক রকমের।কবিতা যেরকমই হোক, যে ফর্ম বা আঙ্গিক হোক কবি ব্যবহার করবেন তার নিজস্ব অনুভূতির বর্ণমালা। সাঈদা আজিজ তার চারপাশের সৌন্দর্য ও বিবর্ণতা, আনন্দ ও বেদনা, স্বপ্ন ও আকাংখা, প্রেম ও বিরহজাত অনুভব পাঠকের কাছে প্রকাশ করেন।কখনো মুক্তক ছন্দ বা ফ্রিভার্সে কখনো অক্ষরবৃত্তের বৃত্তায়নে।আমি সবসময় গুরুত্ব দিই ছন্দকে।এমন কি গদ্য দাম্ভিক প্রাগ্রসরতাও আমাকে টানে।আমি জাঁ আর্তুর রাম্বোর টানা গদ্যকে বিষ্ময়ের সাথে পাঠ করি। পাঠ করি এলেন গিন্সবার্গ, নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, মায়াকোভস্কির কবিতা। এদের গদ্যভঙ্গির কবিতা আমাকে আপ্লুত করে। সাঈদা আজিজের নতুন মেটাফর তার গদ্য কবিতার গতি তৈরি করেছে। কয়েকটা লাইন তুলে দিলে বক্তব্যের সমর্থন মিলবে। ক) কিংবা ইনানী সমুদ্র বৃষ্টির ভাষা (ইনানী সমুদ্র) খ ) প্রগলভা যুবতী অলকলতা মনে পড়ে আজো। (চিতায় অলকলতা) গ) বিন্যস্ত মেঘ অবিন্যস্ত ধোঁয়ার কুন্ডুলি পাকানো। এই লাইনগুলো আমাদের ভাবতে সাহায্য করে পরিমিতি বোধ সম্পর্কে।এবং নতুন ইমেজের প্রতিফলন আমাদের মনোজগতকে রিকল করে। আমরা সাঈদা আজিজের কবিতাকে সমকালের নানা অনুষঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারি। আমরা তার নতুন কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকে স্বাগত করি। তার কাব্যিক পৃথিবী প্রবর্ধিত হোক। রেজাউদ্দিন স্টালিন কবি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব