মুখের স্বাস্থ্যের সাথে দেহের স্বাস্থ্য যেমন সম্পর্কযুক্ত তেমনি দাঁত ও মাড়ির অবস্থা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে অনেকখানি নির্ভরশীল। দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসার আগে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা এবং সেই সাথে ডেন্টিস্ট-এর সাথে সার্বিক শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। দাঁত তোলা বা মুখের সার্জারির ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মাত্রা ও নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। যখনই ডেন্টিস্ট-এর কাছে যাওয়া প্রয়োজন হবে, তখনই ডায়াবেটিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কথা বলা জরুরি এবং ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। যা কিছু মুখে ঘটুক না কেন তার প্রভাব দেহের উপরও পড়ে। তেমনিভাবে দেহের যে কোনো অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে তার প্রভাব মুখের উপর আসে। ডায়াবেটিস রোগীদের যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত আহার, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয়, তেমনি মুখের রোগ প্রতিরোধেও কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয়। একজন ডেন্টাল বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়মিত (বছরে দুইবার ৬ মাস অন্তর) দাঁত-মাড়ি ও মুখ গহ্বরের অবস্থা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। এতে প্রাথমিক অবস্থায় রোগের লক্ষণ ধরা পড়তে পারে এবং অল্প ও সহজ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনটি D মেনে চলতে হয়, যথাD= Diet, D=Drug, D= Discipline, । তেমনি ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের রোগ প্রতিরোধেও তিনটি উ মেনে চলা প্রয়োজন। তবে, প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়, সস্তা ও নিরাপদ অর্থাৎ Prevention is better than Cure আর এই সমস্ত কথা বিবেচনা করেই এই বইটি লিখেছি। আশা করি, এই বইটি পাঠকদের শুধু দাঁতের যত্ন করতে সাহায্য করবে না, বরং সুস্থ দেহও উপহার দিবে।
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী ১৯৫২ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী, পিতা সিলেটের কৃতী সন্তান শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী, বড় ভাই অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, বােন অধ্যাপক ড. মধুশ্রী ভদ্র। স্ত্রী একজন সুগৃহিণী গৌরী চৌধুরী, দুই পুত্র অনির্বাণ চৌধুরী ও সপ্তক চৌধুরী। ড. চৌধুরী স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন কন্ঠ শিল্পী/শব্দ সৈনিক ছিলেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে বি.ডি.এস, ১৯৮২-৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলােশিপ এবং ১৯৯২৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক এট নিব্রোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ফেলােশিপ লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে অর্জন করেন শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী পি-এইচ.ডি। দীর্ঘ ৩২ বৎসর যাবৎ এদেশের দন্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বহু প্রকাশনা ও গবেষণা করেছেন এবং এদেশের জনগণের কাছে দন্ত চিকিৎসার বিভিন্ন তথ্য ও রােগ। প্রতিরােধের উপর বেতার টেলিভিশনে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে উল্লেখযােগ্য অবদান রেখেছেন। ১৯৮৯ সালে মাদক ও ধূমপান বিরােধী সংগঠন মানস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ সংগঠনের মাধ্যমে দেশের যুব সম্প্রদায়কে ধূমপান ও মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বেতার ও টেলিভিশনে একজন সফল স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপক। সঙ্গীত জগতে দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত এবং একজন প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। ইতিমধ্যে ৩টি অডিও সিডি ও একটি ভিসিডি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবন্ধ লিখছেন। যাবৎ ধূমপান ও মাদক বিরােধী কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মেডেল লাভ করেন এবং ২০০১ সালে আমেরিকা বায়ােগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর সদস্য পদ লাভ করেন। ইতােমধ্যে ২৪টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ। উপস্থাপন করেছেন। ইতােমধ্যে ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মুখ ও দাঁতের রােগের চিকিৎসা ও প্রতিরােধ, ধূমপান ও তামাকের ক্ষয়ক্ষতি এবং মাদক ও মাদকাসক্তির উপর তার রচিত গ্রন্থ সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বর্তমানে বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। পেশায় চিকিৎসক হিসাবে রােগীদের নিয়মিত সেবা প্রদানের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন: ধুমপান মাদক বিরােধী আন্দোলনে নিজেকে যেমন সক্রিয় রেখেছেন তেমনি বেতার টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপস্থাপনা, রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশনা ছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির কাজেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।