“মেজর আব্দুস সালেক চৌধুরী বীরউত্তম ও সালদা যুদ্ধ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহর-গ্রামের হাজারাে তরুণ-তরুণী যেভাবে। ঝাঁপ দিয়েছিল জীবন তুচ্ছ করে সে-এক মহাকাব্যিক মহাবিস্তৃত ইতিহাস। অসংখ্য ছবি মিলে আমরা হয়তাে এই মহাসংগ্রামের স্পন্দন অনুভব করতে পারবাে। নিষ্ঠাবান গবেষক তাজল মােহাম্মদ ইতিহাসের তথ্য, কাহিনি, উপাদান সংগ্রহের কাজ করে চলেছেন। দশকের পর দশকজুড়ে। বর্তমান গ্রন্থে তিনি আলেখ্য রচনা করেছেন। তরুণ মুক্তিযােদ্ধা আব্দুস সালেক চৌধুরীর। ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত। পরিবারে জন্ম-নেয়া তরুণ বেড়ে উঠেছেন অনেক ভাইবােনের বিশাল। পরিবারে, স্কুল-কলেজের বন্ধুবৃত্তও ছিল বিস্তৃত, কলেজের পাঠ চুকিয়ে যােগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে, জীবনে সফলতার সােপান মেলা ছিল তাঁর সামনে। আর এমন সময়েই এলাে দেশমাতৃকার। মুক্তির জন্য লড়াইয়ের ডাক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করে। মুক্তিযুদ্ধে ঝাপ দিলেন আব্দুস সালেক চৌধুরী, শহর-গ্রামের মানুষ। একাকার হয়ে যে লড়াই শুরু করে সেজন্য সামরিক নেতৃত্ব ছিল। গুরুত্ববহ। তরুণ এই মুক্তিযােদ্ধা যুদ্ধের ময়দানে নেতৃত্বের ভূমিকা। পালন করলেন অসীম সাহসিকতার সঙ্গে। বিজয়ের পর বীরউত্তম সম্মানে ভূষিত হলেন এবং স্বল্পকাল পর এক দুর্ঘটনায় অবসান হয়। তাঁর দেদীপ্যমান জীবনের। অনন্য এই আলেখ্য এক মুক্তিযােদ্ধার। প্রতিকৃতি, সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের এমন প্রতিচ্ছবি যা আজকের দিনের। পাঠকের অন্তরে গেঁথে দেবে অনন্য ইতিহাসের পরিচয়।
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।