আমেরিকান সাহিত্যের বরপুত্র আর্নেষ্ট মিলার হেমিংওয়ের (১৮৯৯-১৯৬১) বাষট্টি বছরের জীবনকালে পরপর চার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবনের দৈর্ঘ্য ছিল বেয়াল্লিশ বছর। এছাড়াও তার জীবনে যে বহু নারীর আগমন-নির্গমন ঘটেছে, তাদের সাথে সপ্রেম কিংবা প্রেমহীন সম্পর্ক সাঙ্গ হয়েছে পরিণতিহীনতায়। এই নারীরা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছেন হেমিংওয়ের জীবনকে, সিঞ্চন করেছেন প্রেরণাবারি, তাই তাঁর সম্পর্কে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল যে কোনাে বড়াে লেখার জন্য তাঁর জীবনে প্রয়ােজন হয় একজন প্রেরণাদাত্রী নারীর। তাদের সান্নিধ্যে আন্দোলিত তাঁর মনােজগতের মন্থিত আবেগ বিম্বিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যে। তবে কেবল প্রেমিক পুরুষ হিসেবে হেমিংওয়েকে উপস্থাপন করলে তার বিচিত্র জীবনের সবটুকুর বেড় পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন দক্ষ শিকারি, দুঃসাহসী সমর-সাংবাদিক, বুল ফাইটার এবং মুষ্টিযােদ্ধা। দুটো বিশ্বযুদ্ধ এবং স্পেনের গৃহযুদ্ধ খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বীরত্বের জন্য ইতালীয় খেতাব এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাবও তিনি অর্জন করেছিলেন। গাড়ি দুর্ঘটনা এবং নােবেল পুরস্কার প্রাপ্তির আগে পরপর দুটো বিমান দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে একাধিকবার ফিরে এসেছেন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে। এসব বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হেমিংওয়ের জীবনের নানান কাহিনি ও অধ্যায়, নারীদের উপস্থিতি, সান্নিধ্য ও ভূমিকার একটি বিশ্বস্ত রেখাচিত্র বহু আকরগ্রন্থ ও প্রকাশনা থেকে ছেকে তুলে আনা হয়েছে এই বইতে।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও ফারুক মঈনউদ্দীন মূলত গল্পকার। তাঁর ছোটগল্পগুলো ভাষার অনবদ্য কাব্যিকতার জন্য প্রথম থেকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের অন্তর্লীণ অনুভ‚তি ও বহিরাচরণ তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে, আর প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯০ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম গল্পগ্রন্থ আত্মহননের প্ররোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণ এবং অর্থনীতি বিষয়ক লেখালেখিতে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। মার্কিন লেখক ক্লিনটন বি সিলির কবি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী অ্যা পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটির অনুবাদের জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ এবং ভ্রমণগ্রন্থ সুদূরের অদূর দুয়ার-এর জন্য ‘সিটি-আনন্দআলো পুরস্কার ২০১৯’ লাভ করেন। তাঁর এযাবত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ চারটি, ভ্রমণ সাতটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ক গ্রন্থ পাঁচটি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ একটি।