১৯৯৬-'৯৭ সালে যখন এই বইটি লিখি তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তিটি আদৌ স্বাক্ষরিত হবে কিনা, কি কি শর্তে হবে তা নিয়ে ছিল সন্দেহ- সংশয়। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদ পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল স্তরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছ, রাস্তা-ঘাট হয়েছে, পর্যটন সুবিধা অবারিত হয়েছে। এসব এই বইটি লেখার সময় কল্পনাও করা যেতো না। যেভাবে আজকের প্রজন্ম হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না কিভাবে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী বুকের রক্ত দিয়ে সীমিত সামর্থ্যে প্রায় চব্বিশ বছর দুর্গম এলাকায় যুদ্ধ করেছে। কেউ হয়তো আর এটা মনে রাখতে চান না যে একসময় আমাদের দেশের একটি বৃহৎ অঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে শুধু যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বা সরকারকেই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তা নয়, বরং লাখ লাখ উপজাতিকে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সেখানে নিহত হয়েছে বাঙালি, উপজাতি- সবাই। ঘরবাড়ি পুড়েছে সকলের। এ ছিল এক অমানিষার কাল। এখন যারা মনের আনন্দে সাজেকে ঘুরতে যান তাদের সেই সুযোগটি এসেছে বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশের অমোঘ সামর্থের মধ্য দিয়ে। সেই ১৯৯৬ সালে আমি যখন একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে সাজেকে গিয়েছিলাম তখন আমাদের যেতে হয়েছিল বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে। সেখানে একটা বিডিআর পোস্ট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় থেকে সেনাবাহিনীর কোন পেট্রোল দলকে থানচি যেতে পাহাড় পর্বত ডিঙ্গিয়ে সময় লাগতো প্রায় তিনি দিন। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি। পৃথিবীর খুব কম দেশেই বিচ্ছিন্নতাবদী আন্দোলন সাফল্যের সাথে কোন যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে পেরেছে। কলম্বিয়ার ফার্ক গেরিলাদের আজো লক্ষ্য পুরণ হয়নি, সেদেশের সরকারও তার কোন সমাধানে আসতে পারেনি। অন্যদিকে শ্রীলংকায় অত্যন্ত সফলতার সাথে এল টিটি ই গেরিলাদের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করতে পেরেছে সেদেশের সেনাবাহিনী। আবার বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদ পাকিস্তানে চলছে বছরে পর বছর। বাংলদেশ সেনাবাহিনী নির্দ্বিধায় দাবী করতে পারে যে তারা কঠোর পরিশ্রম করে, ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে সরকারকে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে পেরেছে। আমরা এও ভুলে যেতে পারিনা যে এই পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধ করে স্বাধীনতার পর একমাত্র অপারেশনাল বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হয়েছে শহীদ লে. মুশফিক। চলতি সংস্করনে কিছু নতুন ছবিও যোগ করা হয়েছে পূর্ববর্তী সংস্করণের ছবির সাথে।
সামরিক কর্মকর্তা থেকে সাংবাদিক। এমনটি সচরাচর দেখা যায় না। আবু রূশ্দ একসময় ক্যারিয়ার হিসেবে সৈনিক জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাকে সেই পেশা থেকে নিয়ে এসেছেন সাংবাদিকতায়। আবু রূশ্দ-এর জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার পিতা ছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক। রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করার পর অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন ১৩তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে। ক্যাডেট কলেজে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা ও ইংরেজী বিতর্কে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে দীর্ঘ দুই বছরের প্রশিক্ষণকালে ৩য় ও ৪র্থ টার্মে যথাক্রমে কর্পোরাল ও আন্ডার অফিসার এ্যাপয়েন্টমেন্ট লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর কমিশন পান কোর্সের প্রথম দশজনের একজন হিসেবে। সিগন্যাল কোরের অফিসার হিসেবে বেসিক কোর্স ও স্কুল অফ ইনফ্যান্ট্রী এন্ড ট্যাকটিকস্-এ ওডব্লিউ কোর্স কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে স্বাস্থ্যগত কারণে অবসর দেয়া হয় ১৯৮৯ সালে। এল পি আর শেষে তদানীন্তন সরকার বেসামরিক পর্যায়ে সরকারি চাকুরি দেয়ার ব্যবস্থা করলেও তিনি তাতে যোগ দেননি। এরপর চলে আসেন সাংবাদিকতায়। এ পর্যন্ত সিনিয়র রিপোর্টার, বিশেষ সংবাদদাতা ও সহকারী সম্পাদক পদে কাজ করেছেন বেশক’টি প্রথম শ্রেণির দৈনিক পত্রিকায়। টেলিভিশন রিপোর্টিং-এর উপর কোর্স করেছেন ও তাতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা সাংবাদিকতার শুরু আবু রূশ্দ-এর হাত দিয়েই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে জাতিসংঘ পরিচালিত শান্তি রক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর আমন্ত্রণে গিয়েছেন সিয়েরালিওন ও দক্ষিণ সুদানে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেয়া ও মিডিয়া টিমের সদস্য হিসেবে ভ্রমণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানী, ইতালী, ফ্রান্স, দক্ষিণ সুদান, সিয়েরালিওন, চীন ও পাকিস্তান। এছাড়াও ঘুরে বেরিয়েছেন তুরস্ক, মিশর, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যা- ও হংকং। ২০০৮ সাল থেকে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করছেন বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিরক্ষা বিষয়ক জার্নাল ‘বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল’। পাশাপাশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে বিদেশের অনেক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত পত্রিকা ও জার্নালে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর টক শো’তেও অংশগ্রহণ করছেন নিয়মিত। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিবাহিনী ও মানবাধিকার’, ‘ইনসাইড ‘র’-ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার অজানা অধ্যায় (অনুবাদ)’, ‘বাংলাদেশে ‘র’: আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধানে’, ‘Secret Affidavit of Yahya Khan on 1971‘, এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা, রণনীতি ও সশস্ত্র বাহিনী’। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে তার অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।